কীটনাশক থেকে বাড়ছে পারকিনসন রোগের ঝুঁকি !!!
আরিফুর রহমান মিনার
জীনগত পরিবর্তনের কারণে কীটনাশক থেকে পারকিনসন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। একদল গবেষকের গবেষণায় আরও পরিষ্কার হয়েছে যে কীভাবে জিন- পরিবেশগত আন্তঃসম্পর্ক স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে; যা ডোপামিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
ডোপামিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার। এটি মস্তিষ্কের সেসব অংশে বার্তা প্রেরণ করে, যেসব অংশ দৈহিক আন্দোলন ও সমন্বয় নিয়ন্ত্রন করে। বিজ্ঞানীরা এমনই আরো একটি অণু সনাক্ত করেছেন যা মস্তিষ্কের নিউরনকে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
স্ট্যামফোর্ড-ডারহামের ডেল ই (Del E) এর পরিচালক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট লিপটনের মতে, “প্রথমবার আমরা মানুষের স্টেমসেল ব্যবহার করেছিলাম এই গবেষণায়। স্টেমসেলগুলো পারকিনসন রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নেয়া হয়েছিল এটা দেখার জন্য যে, জিনগত পরিবর্তন আর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব যদি একসাথে কাজ করে তবে তা “ডাবল হিট” হিসেবে কাজ করে।” শুধু তাই নয়, এটি নিউরনে ফ্রী রেডিকেল তৈরী করে যা স্নায়ু কোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এখন পর্যন্ত কীটনাশক ও পারকিনসন রোগের মধ্যে সম্পর্ক প্রধানত পশু গবেষণা ও এপিডেমিওলজিকাল গবেষনার উপর ভিত্তি করে ছিল। এই গবেষণায় প্রতীয়মান হলো যে, কীভাবে এই সম্পর্কের ফলে পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কৃষক, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্যদের মাঝে বাড়ছে; যারা কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক উপাদান নিয়ে কাজ করে থাকেন।
নতুন এক গবেষণায় লিপটন এবং রাজেশ আম্বাসূধন এবং এমআইটি (MIT) এর অধ্যাপক রুডলফ জেইনিস পারকিনসন আক্রান্ত রোগীর ত্বকের কোষ পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, কোষের জীনের বিবর্তনে আলফা সিনুক্লিন নামক প্রোটিন উৎপন্ন হয়েছে। আলফা সিনুক্লিন একটি প্রাথমিক প্রোটিন যা Lewy Body তে পাওয়া যায় এবং প্রোটিন স্তুপ তৈরী করে পারকিনসন রোগের ‘প্যাথলজিক্যাল হলমার্ক’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোগীর ত্বকের কোষ ব্যবহার করে গবেষকগণ মানবসৃষ্ট বিবর্তিত Pluripotent stem cell (hiPSC) সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর অন্যান্য কোষে আলফা সিনুক্লিন বিবর্তন সংশোধন করেন। পরবর্তীতে তারা সেসব কোষগুলোকে পারকিনসন রোগে ক্ষতিগ্রস্ত A9- Dopamine সম্বলিত নিউরন বিশিষ্ট বিশেষ ধরনের স্নায়ুকোষে পূনর্গঠিত করেছেন। এভাবে তারা দুই ধরনের নিউরন সেট তৈরী করেন। জেনিস ল্যাবের বিজ্ঞানী ও গবেষক ফ্রাঙ্ক সোলডনার বলেন, “স্বাভাবিক ও বিবর্তিত নিউরন প্যারাক্যাট, ম্যানেব অথবা রোটেননসহ অন্যান্য কীটনাশকের সংস্পর্শে আসলে কোষে বিবর্তনসহ ফ্রী রেডিকেল তৈরী হয় যা ডোপামিন সম্বলিত নিউরনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।”
ডেল ই (Del.E) এর গবেষকদের মতে, বস্তুত আমরা EPA-গ্রহনযোগ্য মানের যথেষ্ট কম মাত্রায় সল্প সময়ের সংস্পর্শেই কীটনাশকগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব পর্যবেক্ষন করেছি। বিবর্তিত কোষ ও জিনগত একইরুপ নিউরনসমুহ সম্পর্কে ধারনা থাকায় কীটনাশকঘটিত নিউরনজনিত মৃত্যুতে জিনগত অবদানের ব্যাখ্যা করা আরো সহজতর হয়েছে। এক্ষেত্রে গবেষকগণ জানতে সক্ষম হয়েছেন যে কীভাবে বিবর্তিত কোষগুলো কীটনাশকের সংস্পর্শে আসলে MEF2C-PGC1alpha নামক মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত পাথওয়েকে ব্যহত করে যা ডোপামিন সম্বলিত নিউরনকে রক্ষা করে। ফ্রী রেডিকেল MEF2C প্রটিনকে আক্রমন করে এর পাথওয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, যা সাধারনত স্নায়ুকোষগুলোকে কীটনাশক হতে রক্ষা করে। বিজ্ঞানী আম্বাসূধন বলেন, “যখন আমরা উক্ত পাথওয়ে এবং কীটনাশক দ্বারা পরিবর্তিত অণূ সম্পর্কে জানতে পারলাম, উক্ত পাথওয়ের উপর ফ্রী রেডিকেলের প্রভাব নিষ্ক্রিয়কারী যৌগ চিহ্নিত করতে আরো সূক্ষ গবেষণা চালিয়েছিলাম। isoxazole নামক একটা যৌগ চিহ্নিত হল। যা পরীক্ষনীয় কীটনাশক দ্বারা বিবর্তিত নিউরনকে মৃত্যু হতে রক্ষা করে। তিনি আরো বলেন, FDA অনুমোদিত কিছু ঔষধে isoxazole উদ্ভূত যৌগ রয়েছে, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেসব ঔষধকে পারকিনসন রোগীর ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা অনুসন্ধান করা।
গবেষণায় বিবর্তন, পরিবেশ এবং ডোপামিন সম্বলিত নিউরনের ক্ষয়ের মধ্যে সম্পর্কটি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। দলটি আরো অতিরিক্ত আনবিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের পরিকল্পনা করছে যেগুলোর মাধ্যমে পারকিনসন এবং অন্যান্য স্নায়ুঘটিত রোগ যেমনঃ আলঝেইমার ও এএলএস এর উপর জিন ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কের অবদান উদ্ঘাটিত হবে। লিপটন বলেন, ভবিষ্যতে, “বিবর্তনের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উক্ত রোগসমুহের পূর্বানুমানের ভিত্তিতে নির্ধারন করা যাবে কোন নির্দিষ্ট পরিবেশ আমরা এড়িয়ে চলব। অধিকন্তু, কোন নির্দিষ্ট রোগী কোন চিকিৎসার মাধ্যমে এসকল রোগ প্রতিরোধ বা সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারবে তাও আমরা নির্ণয় করতে সক্ষম হবো।”
সূত্রঃ সাইন্স ডেইলি