ক্যানারি দ্বীপ
আশ্চর্য এক দ্বীপ ‘ক্যানারি দ্বীপ’ বহুযুগ ধরে ইউরোপের নানা দেশের বহু নৌযান এই পথে যাতায়াত করেছে
উত্তর ও উত্তর-পূর্বে ইউরোপ। উত্তর আকাশের ষাট ডিগ্রি কোণে ধ্র“বতারাকে পেছনে ফেলে পূর্ব দিকে আফ্রিকা মহাদেশকে রেখে নাবিকরা যখন আটলান্টিকের দক্ষিণ বরাবর চলতেন তখন প্রায়ই তাদের চোখে পড়ত দলবদ্ধ পাখির ঝাঁক। পশ্চিম থেকে উড়ে এসে তারা পশ্চিম দিকেই যেত। তাদের গায়ের রং হলুদ এবং মাথায় লালঝুঁটি। কখনো কখনো এই পাখিগুলো এসে বসত জাহাজের মাস্তুলে। গান গাইত আপন মনে নাচত মনের আনন্দে আর নাবিকরা তাদের দেখত আর অবাক হতো। নাবিকরা পাখিগুলো ধরার চেষ্টা করত কিন্তু পাখিগুলো কিছুতেই ধরা দিত না। আকাশে উড়ে গান গাইতে গাইতে চলে যেত পশ্চিমদিকে। যেদিকে আটলান্টিকের শুধু জল আর জল ডাঙ্গার চিহ্নমাত্র নাই। সেই থেকে লালঝুঁটি হলুদ পাখির নাম ক্যানারি আর সেই থেকে উৎপত্তি স্পেন ও পর্তুগালের ক্যানারিজ সং অ্যান্ড ড্যান্স।
কিন্তু পাখিগুলো পশ্চিমদিকে কোথায় যায়। একবার কিছু নাবিক পাখিদের পিছু নিল। কয়েকদিন চলার পর তাদের চোখে পড়ল দিগন্ত বিস্তৃত ধোঁয়া আর ধোঁয়া। দিন যায় রাত আসে। চারদিকে আঁধার আর নিকষ কালো পানি। এত কালো কুচকুচে পানি তারা কখনো দেখেনি। চারদিক ভয়াবহ রকমের আঁধার। নাবিকরা ভয় পেয়ে যায়। এরপর তারা যখন দেখে পশ্চিম আটলান্টিকের সাগরের বুকে আগুন লেগেছে তখন তারা ভয়ে আতঙ্কে বিবশ হয়ে পড়ে। সে আগুনের লেলিহান শিখা যেন আকাশকে পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলছে। আর আগুন চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের চোখে এ এক নারকীয় দৃশ্য। তারা তাড়াতাড়ি ফিরে আসে তাদের জাহাজে। এই কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপের বন্দরে বন্দরে। সব নাবিকরা জানে যে পাখি নয়, এগুলো কালো ছায়া। এর টানে যে যাবে সেই ধ্বংস হবে।
ক্যানারি দ্বীপে আসলে ছিল একটি আগ্নেয়গিরি। এখান থেকেই পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে বিস্তৃত ছিল সেই হারানো মহাদেশ ‘আটলান্টিস’ ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের সম্মিলিত ধ্বংসযজ্ঞের ফলে বিপুল সভ্যতার অধিকারী সেদিনের আটলান্টিস মহাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে আজকের এই আটলান্টিক মহাসাগরে। গবেষকরা সংগ্রহ করেছেন অনেক ভৌগলিক তথ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন যার মধ্যে রয়েছে প্রকাণ্ড অট্টালিকা, প্রশস্ত রাজপথ এবং সুগভীর নর্দমার বিস্ময়কর সব আলোকচিত্র। ক্যানারির আগ্নেয়গিরি স্তিমিত হয়ে এসেছে। ফুটে উঠেছে একটি ছোট্ট সুন্দর দ্বীপ।
সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ৩০/০৫/২০১৩