গুইসাপের দুর্দিন

আজিজুর রহমান

download (7)পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলেই গুইসাপ দেখা যায়। আর বাংলাদেশসহ গোটা ভারত উপমহাদেশ হচ্ছে গুইসাপের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বাংলাদেশে যে ১২৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে, গুইসাপ হচ্ছে লেসারটেলিয়া উপবর্গের ভ্যারিনিডাই গোপের সরীসৃপ। পৃথিবীতে মেরুদণ্ডি প্রাণী হিসেবে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল শীতল রক্তবিশিষ্ট এই সরীসৃপরা, যারা স্থলভাগে অভিযোজিত হয়ে বসবাস শুরু করে। এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র বিপুলসংখ্যায় গুইসাপ দেখা যেত। এখনো কম-বেশি এদের দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এ প্রজাতির গুইসাপ দেশের সব এলাকায় কোনোমতে টিকে আছে। এগুলো হলো : ১. কালো গুইসাপ, ২. সোনা গুইসাপ এবং ৩. রামগদি গুইসাপ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) কালো গুইসাপকে সংকটাপন্ন এবং সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপকে বিপন্নের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। গুইসাপ এক ধরনের টিকটিকি। এদের জিহ্বা মসৃণ, লম্বা, সরু, অগ্রভাগ দ্বিখণ্ডিত, লিকলিকে এবং সাপের জিহ্বার মতো সংকোচনশীল। দাঁতগুলো পোরোডন এবং পেছনে বাঁকানো। মুখ বন্ধ থাকলেও তুন্তের আগায় ফাঁক থাকায় তার ভেতর দিয়ে জিহ্বা চলাচল করতে পারে। সারা শরীর দানাদার বা গোলাকৃতির আবৃত। কালো গুইসাপ ৫ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। সোনা গুইসাপ কালো গুইসাপের চেয়ে ছোট আকৃতির হয়। রামগদি গুইসাপ বিশাল আকৃতির হয়ে থাকে। একটি  পূর্ণ বয়স্ক রামগদি গুইসাপ সর্বোচ্চ ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কালো গুইসাপ লোকালয়ে বসতবাড়ির আশপাশে বাস করে। তবে সোনা গুইসাপের স্বভাব কালো গুইসাপের সম্পূর্ণ বিপরীত। এরা লোকালয় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। এদের বেশি দেখা যায় হাওর-বিলের কাছাকাছি জায়গায়। এরা দক্ষ সাঁতারু। আর রামগদি গুইসাপ সম্পূর্ণ লোনা পানির বাসিন্দা। সুন্দরবনসহ উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে এদের বসবাস। এরা গাছে চড়তে বেশ পটু। গুইসাপের খাদ্য হচ্ছে ছোট সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, কেঁচো, ছোট মাছ, কাঁকড়া, শামুক, কচ্ছপ, হাঁস-মুরগির ডিম ইত্যাদি। সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগিও এরা শিকার করে। এছাড়া জীবজন্তুর মৃতদেহও এরা সাবাড় করে। গুইসাপ কুমিরের মতো ছোট বাচ্চার পরিচর্যা করে না। তাই বাচ্চাগুলোর অধিকাংশই নানা প্রাণীর পেটে চলে যায়। খাদ্য শৃঙ্খলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গুইসাপ পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে। এই প্রাণীটি নিঃসন্দেহে পরিবেশবান্ধব উপকারী জীব। বন ধ্বংস, খাদ্যাভাব, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত কৃষি কাজ, নগর সভ্যতার দ্রুত সম্প্রসারণ ইত্যাদি নানা কারণে এই উপকারী পরিবেশবান্ধব প্রাণীটি এখন হুমকির মুখে।

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ২২/০৬/২০১৩

Related Articles

One Comment

  1. শুধু আইন করেই এসব বন্যপ্রাণী রক্ষা করা যাবে না, প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics