ঘাসফড়িঙ এর নাম হলো স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো'র নামে !!!
শাওন চৌধুরী
সম্প্রতি কোন এক কাঠের গায়ে ঘাসফড়িঙের এক নূতন প্রজাতি আবিস্কৃত হয়েছে। বাচ্চা জন্ম নেয়ার পরে যেমন তার নামকরণের প্রয়োজনের পড়ে ঠিক তেমনি কোন প্রজাতি আবিস্কৃত হলেও তার নূতন নামকরণের প্রয়োজন পড়ে যে নামে সারা বিশ্ব তাকে চিনবে। মজার বিষয় হচ্ছে, ঘাসফড়িঙের এই নূতন প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো (Sir David Attenborough)এর নামানুসারে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই লোকটা কে যে তাঁর নামানুসারে একটা নূতন প্রজাতির প্রাণির নাম দেয়া হবে, কি তাঁর পরিচয়! আসুন এই বিশেষ লোকটি সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেই…
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো এর পুরো নাম Sir David Frederick Attenborough এবং তিনি একজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ যিনি কিনা নানা ধরণের তথ্যচিত্রে ধারাবর্ণনা করে থাকেন। তিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে ন্যাশনাল হিস্ট্রি এর বিভিন্ন ধরণের তথ্যচিত্রের কথাগুলো লেখালেখি ও উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের পরিচয় সমগ্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি সমগ্র বিশ্বজুড়ে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য যদিও তিনি নিজেকে এটা ভাবতে রাজী নন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা সাদাকালো এবং রঙিন উভয় প্রোগ্রামে উপস্থাপনের জন্য British Academy of Film and Television Arts (BAFTA) পুরস্কার পেয়েছেন। ভোটের মাধ্যমে তিনি ব্রিটেনের সেরা ১০০ জনের মধ্যেও স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর আরো একটি পরিচয় রয়েছে, তিনি অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক Richard Attenborough এর ছোট ভাই।
এতো কথা বলতে বলতে আসল কথা থেকেই অনেক দূরে চলে গেছি! সম্প্রতি কাঠের গায়ে যে ঘাসফড়িঙের প্রজাতিটি আবিস্কৃত হয়েছে তা প্রায় ২০ মিলিয়ন বছর পূর্বের। আসুন এই বিখ্যাত বক্তার নামানুসারে যেসব প্রাণি বা উদ্ভিদের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর কিছু অংশের সাথে পরিচিত হই!
১। Prethopalpus attenboroughi প্রজাতির এক মাকড়শার ছবি হাতে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো।
২। সম্প্রতি ডোমিনিকান রিপাবলিকের এক কাঠের মধ্যে আবিস্কৃত ক্ষুদ্র এক প্রজাতির ঘাসফড়িঙ। প্রজাতিটির নাম Electrotettix attenboroughi.
৩। নীচের ছবির গাছটি হচ্ছে, ‘অ্যাটেনবোরো’স পিচার প্লান্ট’, এটি ফিলিপাইনের Palawan নামক দ্বীপের এন্ডেমিক উদ্ভিদ অর্থাৎ ঐ স্থান ছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন স্থানে এদেরকে দেখতে পাওয়া যায়না। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nepenthes attenboroughii ২০১২ সালে ১০০ বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির যে তালিকা করা হয়েছিল এটি তাদের মধ্যে অন্যতম।
৪। একমাত্র ইকুয়েডরে প্রাপ্ত এই অদ্ভুত সুন্দর গাছটি ২০০৯ সালে আবিস্কৃত হয়েছিল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Blakea attenboroughii.
৫। এরা হচ্ছে বড় ঠোঁটযুক্ত ইকিডনা (Long Beaked Echidna), এদেরকে নিউ গায়ানাতে দেখতে পাওয়া যায়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Zaglossus attenboroughi.
৬। এরা হচ্ছে মাদাগাস্কারের এক ধরণের চিংড়ি (Ctenocheloides attenboroughi).
৭। নীচের ছবিতে মেলবোর্নের ভিক্টোরিয়া জাদুঘরের ডক্টর জন লং এর হাতে এক প্লাকোডার্ম মাছের ফসিল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের গগো নামক স্থানে পাওয়া গেছিল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Materpiscis attenboroughi.
৮। জুরাসিক পিরিয়ডের সাইনেমুয়ান নামক স্টেজে এদেরকে ইউরোপে দেখতে পাওয়া যেত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Attenborosaurus conybeari.
স্যার অ্যাটেনবোরো সম্পর্কে এতো তথ্য জানার পরে নিশ্চয় আর আপনার মনে প্রশ্ন আসছে না যে তিনি আসলেই কি এটার যোগ্য কিনা! আপনাকে নিজস্ব একটা মতামত জানাই, ওনার ‘লাইফ’ সিরিজের ৯টা ও ‘লাইফ ইন কোল্ড ব্লাড’ এর পাঁচটা ডকুমেন্টারি দেখার পরে আর অন্য কোন বক্তার উপস্থাপিত কোন ভিডিও আমার মনে দাগ কাটতে পারেনি!