চোর পুলিশে সখ্য !!! মিরক্যাট আর ড্রোনগো

মাহবুব রেজওয়ান সানি

চোর!! সে কি কখনো বন্ধু হতে পারে? মনুষ্য সমাজে আপনি হয়তো এটা নিয়ে কোন বিতর্কেই যেতে চাইবেন না। কিন্তু প্রাণীজগতের বিশাল সম্ভাব্র নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে আপনাকে কিছুটা অবাক হতেই হবে! প্রাণীজগতের অন্যান্য সদস্যরা কিন্তু এতোটা স্বার্থপর নয়। প্রাণীজগতের কিছু সদস্য আপনার কাছ থেকে কিছু চুরি করে নিলেও, তার বিনিময়ে কোন না কোন ভাবে তার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করে। আবার বিপরীতভাবে বলতে গেলে, আপনার কিছুটা উপকার করে তার বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে না হয় সামান্য কিছু চুরি তারা করতেই পারে। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে এটা বড় কোন অপরাধ নয় মোটেও!

আফ্রিকার ‘কালাহারি’ মরুভুমিতে এমনই উদাহরণ দেখা যায় মিরক্যাট (meerkat)  এবং ড্রোনগো (Drongo) বা ফিঙ্গেদের মাঝে।মিরক্যাট আফ্রিকার কালাহারি মরুভুমির একটি অতিপরিচিত শিকারি প্রাণী।এরা ছোট বা মাঝারি পোকামাকড় শিকার করে। এদের শিকারের মধ্যে  মাকড়সা থেকে শুরু করে বিষাক্ত কাঁকড়াবিছা পর্যন্ত সব ধরণের পোকামাকড়ই রয়েছে। ‘কালাহারি’ এমনিতেই টিকে থাকার জন্য খুবই দুর্গম। এর প্রধান কারণ প্রতিকূল পরিবেশ এবং খাদ্যের স্বল্পতা! এতো ঝামেলার মাঝে যদি পাখিরা (ড্রোনগো পাখি) এসে মিরক্যাটদের খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলে, তাও যদি আবার ধোঁকা দিয়ে; তাহলে মিরক্যাটদের মনে যে কতোটা বিরক্তির উদ্রেক হয় তা সহজেই অনুমেয়!Meerkat_drongo

প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অনেক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রাণীজগতের কেউ কেউ নিজেদের খাদ্যাভ্যাস পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলে। কেউবা আবার ছদ্মবেশ ধারণে দারুণ পটু। কারো বা রয়েছে ক্ষিপ্র গতি। তবে বিরুপ পরিবেশে, বিশেষ করে শীতকালে যখন প্রচণ্ড খাদ্যাভাব দেখা দেয়, তখন ড্রোনগো পাখিরা একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মিরক্যাটদের কাছ থেকে খাবার চুরি করে। এই পাখিগুলো মিরক্যাটদের রীতিমতো ধোঁকা দিয়ে, বোকা বানিয়ে খাবার চুরি করে। meerkat

মিরক্যাট মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। তাদেরও বড় প্রাণীদের শিকারে পরিণত হওয়ার ভয় রয়েছে। ড্রোনগো পাখিরা গাছের উপরে থাকায় সহজেই শিকারি প্রাণীদের দেখতে পায়। তখন এরা একটি বিশেষ আওয়াজের মাধ্যমে মেরক্যাটদের সতর্ক করে দেয়। এতে করে  মিরক্যাটরা সহজেই নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে পারে। এই কাজের মাধ্যমে পাখিগুলো খুব সহজেই মিরক্যাটদের বিশ্বাস অর্জন করে নেয়। এরপরেই আসল চালাকিটা করে পাখিগুলো। যখনই তারা দেখতে পায় কোন মিরক্যাট বেশ ভালো কোন শিকার ধরে ফেলেছে, তখনই এই পাখিগুলো সেই বিশেষ সতর্ক সঙ্কেত ব্যাবহার করে। মিরক্যাট বেচারারা বিপদ মনে করে খাবার ফেলে রেখেই দে ছুট! সেই সুযোগে ড্রোনগো পাখিরা ফেলে রাখা শিকার ধরে খেয়ে ফেলে।বেচারা মিরক্যাটের তখন ‘ চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’ বলা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।drongo

কিন্তু মিরক্যাটরাও কম চালাক নয়। একই পদ্ধতি ব্যাবহার করে বার বার কিন্তু তাদের বোকা বানানো যাবে ভাবলে আপনি ভুল করবেন। মানুষ নয় বলে পাহারাদার রাখতে পারবে না, তা কিন্তু নয়! যাই হোক, পাখিদের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য তারা নিজেদের মধ্য থেকেই কিছু পাহারাদার নিয়োগ দেয়। যাদের কাজ, নিজেদের সীমানায় দাঁড়িয়ে চোখকান খোলা রেখে শিকারি প্রাণীদের উপস্থিতি বাকিদের জানানো। শিকারি প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলেই নিজেদের একটি বিশেষ সঙ্কেত ব্যাবহার করে বাকিদের সতর্ক করে দেয় এই পাহারাদার মিরক্যাটরা। এমন ভাবে পাহারাদার রাখলে ড্রোনগোরা চুরি করবে কিভাবে? এখানেই হচ্ছে মজা! ড্রোনগোরা এতোই বুদ্ধিমান যে পাহারাদার মিরক্যাটদের সঙ্কেতও তারা অবিকল নকল করতে পারে। প্রয়োজন মতো সেই সঙ্কেত ব্যাবহার করে আবার তারা মিরক্যাটদের বোকা বানিয়ে খাবার চুরি করে নেয়!

তবে ড্রোনগো বা ফিঙ্গে পাখিদের উপর খুব বেশি বিরক্ত হবার দরকার নেই। এমন ধোঁকাবাজি ওরা শুধু শীতের সময়েই করে থাকে; যখন কিনা খাবারের তীব্র অভাব দেখা দেয়। বাকি সময় কিন্তু ওরা মিরক্যাটদের শিকারি প্রাণী থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্যই করে( কোন রকম চুরি চামারি ছাড়াই)।

আসলে বিচিত্র এই প্রাণীজগতে সকল প্রাণীই বলতে গেলে অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। এভাবেই গড়ে ওঠে একটি সুন্দর প্রাণীসমাজ। সেই সমাজে কেউ শিকারি, আবার কেউবা শিকার। কেউ বন্ধু, আবার কেউবা শত্রু! এর মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে একটি সুন্দর বাস্তুতন্ত্র। যার উপর ভিত্তি করে টিকে আছে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী!

সিনিয়র এডিটর

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics