জলবায়ুর চ্যালেঞ্জে হারলে ক্ষমা নেই
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে এর বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুধু মানুষ নয়, পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশের অস্তিত্ব বিরাট ঝুঁকির মুখে।
“জলবায়ু ও পরিবেশ বিনষ্টের বর্তমান এই ধারা পরিবর্তন করতে না পারলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আর এজন্য তারা আমাদের কখনই ক্ষমা করবে না”, বলেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে একক, স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বিমুখী প্রভাব মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা তাদের জন্য শুধু একটি কঠিন সমস্যাই নয়, এটি তাদের প্রতি অবিচার ও অন্যায্য।”
“কিছু ধনী মানুষের জীবনযাপন প্রণালী সাধারণ গরীব মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখোমুখি করবে-এটা কেন হবে”, প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।
তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোকে মুখ্য ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের সকল দেশ সমানভাবে দায়ী নয়। ধনী ও উন্নত দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর জীবনযাপন এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া এই সমস্যার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী।”
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো যতো দেরি করবে বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা সৃষ্টিতে ততোবেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আর এ জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রমে’ ওই ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যাগুলো অভিন্ন হলেও এক্ষেত্রে ভিন্নতর দায়িত্ববোধ এবং নিজস্ব সক্ষমতা নীতির ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধানের দিকে এগোতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ‘কম্যুনিটি-ভিত্তিক অভিযোজনকে’ সামষ্টিক পরিকল্পনা, কাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে উপকূলে বসবাসকারী প্রায় চার কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনের মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে।
এতে ওই এলাকার মানুষের জীবন যাপন প্রণালী ও অর্থনীতি ইতোমধ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
এ কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রত্যাশিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি জানান, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) তৈরি করা হয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ইতোমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এ তহবিলের আওতায় ১৩৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ৬৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ফাণ্ডে উন্নয়ন সহযোগীদের ১৮৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. শফিকুর রহমান পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটউট ফর এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের (আইআইইডি) সিনিয়র ফেলো ড. সালিম উল হক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান এবং ইউএনএফসিসিসি সেক্রেটারিয়েটের ইউসুফ নাসিফ বক্তব্য দেন।
রিপোর্ট সূত্রঃ http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article616427.bdnews