জলার তিতির

জলার তিতির বা বাদা তিতির (Francolinus gularis) (ইংরেজি: Swamp Francolin) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ফ্র্যাঙ্কোলিনাস (Francolinus) গণের এক প্রজাতির বড় তিতির। এরা দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও নেপালের স্থানীয় পাখি। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশেও এদের অবস্থান ছিল এবং বর্তমানে এরা এদেশে আছে কিনা সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যপ্রমাণ নেই।গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Vulnerable বা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। সারা বিশ্বে আনুমানিক ১০০০০ থেকে ১৯৯৯৯টি জলার তিতির রয়েছে।

Francolinus_gularis_hmবাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল জলার তিতিরের প্রধান আবাসস্থল। ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা বা পদ্মা নদীর অববাহিকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি। বাংলাদেশে এরা একসময় বেশ ভাল অবস্থায় ছিল। পদ্মা ও মেঘনা নদীর অববাহিকা এদের প্রধান আবাস ছিল। অতীতে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দরবন, ঢাকা, ময়মনসিংহ (গারো পাহাড়),সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে জলার তিতির দেখার নজির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে এদের শেষ দেখা গেছে। ব্যাপকহারে আবাসন ধ্বংস, কীটনাশক প্রয়োগ ও বনাঞ্চল কেটে চাষাবাদের ফলে জলার তিতিরের অস্তিত্ব  হুমকির মুখে পড়েছিল। এছাড়া মাংসের জন্য শিকারও এদের এদেশ থেকে বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।

এশীয় তিতিরদের মধ্যে জলার তিতির সবচেয়ে বড় আকৃতির। লম্বা পায়ের জন্যে এদের একই গণের অন্যান্য প্রজাতি থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। এদের পিঠ ও ডানা কালচে-বাদামী পালক দ্বারা আবৃত। মাথা ও ঘাড় একই রঙের পালক দ্বারা আবৃত। পিঠে অনেক মিহি সাদা ডোরা থাকে। অন্যসব তিতির প্রজাতির মতোই এদের পেটে ও বুকে মোটা মোটা উজ্জ্বল সাদা দাগ থাকে। সাদা মোটা ভ্রু দেখা যায়। ঠোঁটের গোড়া ও চোখের কোলও সাদা। গলা লালচে-কমলা। পা লালচে। স্ত্রী ও পুরুষ তিতির দেখতে একই রকম। তবে পায়ের গাঢ় রঙ আর পায়ের পেছনের আঙ্গুল দেখে সহজেই পুরুষ তিতিরকে সনাক্ত করা যায়।জলার তিতিরের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৭ সেন্টিমিটার।

জলার তিতির প্রধানত জলার তৃণভূমি বা নদীসংলগ্ন তৃণভূমি পছন্দ করে। এছাড়া বনসংলগ্ন ঘাসভূমি কিংবা ঝোপঝাড়েও বিচরণ করে। এছাড়া ধানক্ষেত বা আখক্ষেতেও চরে বেড়ায়। এদের লম্বা পা জলায় চলাফেরা করার উপযোগী।বীজ ও নরম উদ্ভিদাংশ এদের প্রধান খাবার। এছাড়া শামুক, ঝিনুক, পোকামাকড়, কেঁচো, চিংড়ি, ছোট মাছ ও কাঁকড়া এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।এদের প্রজনন ঋতু স্থানভেদে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত। বাসা বানানো হয় প্রধানত ঘাসবনে। ঘাস আর আগাছা দিয়ে শক্তপোক্ত গোলাকার বাসা বানানো হয়। বাসায় ২-৮টি (গড়ে ৪টি) ডিম পাড়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics