জীবজন্তুর স্কুল

ছোটবেলায় সবাই ঘুম ভেঙে স্কুলে যেতাম। আমাদের শিশুরাও এখন যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, প্রাণীদেরও স্কুল আছে। ওদেরও বুড়োদের কাছ থেকে শিখে নিতে হয় পৃথিবীতে টিকে থাকার কৌশল। ওদেরও আছে রাস্তা, পথের অলিগলি মনে রাখার চেষ্টা! বিস্তারিত জানাচ্ছেন নাসিমূল আহসান


স্বাগতম প্রাণীদের স্কুলে। ভর্তি সম্পূর্ণ ফ্রি, সঙ্গে দুপুরের খাবার। খাবার হিসেবে রেসিপি একটাই- কাঁকড়া-বিছা! যাকে সহজ করে লিখলে স্করপিয়ন। খাবার হিসেবে যদিও কাঁকড়া-বিছা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর; কিন্তু এগুলো খুবই বিপজ্জনক। চোখের পলকে ঘটে যাওয়া একটি ছোট ভুলের কারণে বিষাক্ত কাঁকড়া-বিছার হাতে মৃত্যু হতে পারে যে কোনো মিরকটের। সে কারণেই স্কুল বাধ্যতামূলক সব মিরকট শিশুর জন্য। মিরকট হলো বানর প্রজাতির এক ধরনের প্রাণী, যাদের আপনি খুঁজে পাবেন বতসোয়ানার কালাহারি মরুভূমিতে। জিম্বাবুয়ের লোকগাথায় এদের সূর্যদেবতা বলেও ডাকা হয়। প্রাণিজগতের আরও অনেক সদস্যের মতো মিরকটও ওদের সন্তান-সন্ততির জন্য পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করেছে। সে জন্য ওরা আমাদের মতো কিন্তু স্কুল-কলেজ বানায়নি! ছোট্ট মিরকটকে শেখানোর জন্য এক জায়গায় হাজির হয় বুড়োরা। তারপর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে খাবার সংগ্রহ করার হাজার কৌশল শেখানোর কাজ। back-to-school-animals-mice-tests

চলুন, মিরকট একাডেমিতে ফিরে যাই! অভিজ্ঞ ও প্রাপ্তবয়স্ক মিরকট ওদের স্কুলে আসা শিশু মিরকটদের শিকার ধরার ব্যাপারে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়। এ সময় মৃত কাঁকড়া-বিছাদের ব্যবহার করা হয় আমাদের খাতা-পেনসিলের বিকল্প হিসেবে! প্রথমদিকে কাঁকড়া-বিছাদের শরীরের কাঁটাবহুল বিষাক্ত অংশটুকু ফেলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। উদ্দেশ্য, শিশু মিরকটরা যাতে খুব সহজেই কাঁকড়া-বিছার খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য অংশটুকু চিহ্নিত করে আলাদা করতে পারে। এরপর মৃত বিছার শরীরের কাঁটাযুক্ত অংশ দিয়ে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। কিশোর মিরকটদের জন্য এই কাজটাতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। কিন্তু এরপর প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত স্তর। তরুণ মিরকটদের সামনে তুলে দেয়া হয় জীবন্ত স্করপিওন! পূর্বঅভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের সাহস দিয়ে যুবক মিরকটরা শিখে নেয় বিষাক্ত খাবার ধরার কায়দা-কানুন, হাজার রীতিনীতি।

খাদ্য সংগ্রহের এ ধরনের জ্ঞান ভাগাভাগি করা প্রাণিজগতের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়। মিরকটদের মতো পিঁপড়াদের ক্ষেত্রেও খাটে একই কথা। যখন একটি পিঁপড়া কোনো খাবারের উৎসমুখ খুঁজে পায়, তখন সে তথ্য পৌঁছে দেয় তার অনুগত পার্শ্ববর্তী পিঁপড়াটিকে। ঝাঁক বেঁধে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ার পর ও খুব ধীরে ধীরে হাঁটে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটু পর পর গিয়ে হাঁটা থামিয়ে দেয়। গতি কমানো বা হাঁটা থামিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে,  শিশু ও অনভিজ্ঞ পিঁপড়াটি বাসা ও খাদ্যের উৎসমুখ, পথঘাট যাতে মনে রাখতে পারে। এ সময় শিক্ষার্থী পিঁপড়াটি সব সময় তার শিক্ষকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আর ভুল হলে তো কথাই নেই। আবার নতুন করে গোড়া থেকে হাঁটা শুরু। মৌমাছিরা পরস্পরের কাছে খাদ্যের উৎস সম্পর্কে বার্তা পাঠানোর জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গায় উড়ে উড়ে নাচানাচি করে। আর বানরকে ছোটবেলায় শেখানো হয় নানা ধরনের কিছু বিশেষ শব্দ তৈরির কায়দা-কানুন। এসব শব্দ শেখা ও তৈরি করার মাধ্যমে বানররা গোষ্ঠীর অন্য বানরদের শিকারির অবস্থান ও আগমনের ব্যাপারে সাবধান করে দেয়। সূত্র : ডিসকভারি নিউজ

http://alokitobangladesh.com/varities/2013/05/28/2300

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics