ঝগড়াটে হলেও বড় পেঙ্গা ভীতু পাখি
আলম শাইন
বেজায় রকমে ঝগড়াটে। বলা নেই কওয়া নেই যখন তখন ঝগড়া বাধিয়ে বসে। ঝগড়াটে হলেও এরা দল ছাড়া থাকতে পারে না। ঝগড়া-ফ্যাসাদের সময় বিপুল বিক্রম দেখালেও আসলে ওরা ভীতুর ডিম। তুমুল ঝগড়াঝাটির সময়ও হঠাত্ কোন উল্টা-পাল্টা শব্দ শুনলেই সবাই মিলে একদম চুপ হয়ে যায়। তখন টু শব্দটিও শোনা যায় না। মনে হবে একটা পাখিও নেই সেখানে। বোঝাই যায় না যে, কয়েক সেকেন্ড আগেও সেখানে ‘নরক গুলজার’ করছিল একদল পাখি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের পাহাড়ি অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও এরা আধা চিরসবুজ বনে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দেশে চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম,হবিগঞ্জেরে সাতছড়ি এবং শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ার জঙ্গলে গেলে এদের সাক্ষাত্ মেলে।
পাখিটাকে বাংলায় বলে বড় পেঙ্গা, ইংরেজিতে বলে গ্রেটার নেকলেসড লাফিং থ্রাস, বৈজ্ঞানিক নাম: Garrulax pectoralis, গোত্রের নাম:’সিলভিআইদি’ আমাদের দেশে কয়েক ধরনের পেঙ্গার দেখা পাওয়া যায়। এর ছোট পেঙ্গা, লালচে ঘাড় পেঙ্গা, সাদা মুকুট পেঙ্গা ইত্যাদি। এদের মধ্যে সাদা মুকুট পেঙ্গা অত্যন্ত সুদর্শন। অনেকের কাছে বড় পেঙ্গা ‘কণ্ঠীদামা’ নামেও পরিচিত।
বড় পেঙ্গা লম্বায় ২৯ সেন্টিমিটার। ঘাড়ের উপরাংশ পাটকিলে নিচের দিকে সাদাটে। চোখের ওপর ভ্রূর মত দেখতে সরু সাদা রেখা বক্রাকারে নিচের দিকে নেমেছে। গলায় কালো কণ্ঠী। পিঠ কমলা-বাদামি। ডানার প্রান্ত কালো। লেজের ডগার পালক সাদাটে। বুক-পেট হলদে-সাদা। চোখের বলয় হলুদ। ঠোঁট কালচে, বেশ শক্ত, ঠোঁটের গোড়ার দিকে সরু সরু লোম রয়েছে।
মাটিতে বা গাছের ওপর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। প্রজনন সময় মার্চ-জুলাই। ঝোপের ভেতর বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (২৪/০৫/২০১৩)