
ঢাকার ভূমিকম্প মানচিত্র তৈরিতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক
ঢাকা শহরের ভূমিকম্প মানচিত্র তৈরিসহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হবে। কীভাবে ওই ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনাও করা হবে। আর এ কাজে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের শহরে ভূমিকম্প সহনশীল প্রকল্প বিষয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মশালায় বক্তারা ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান বাড়ানো এবং সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে শীর্ষে রয়েছে। দেড় কোটি জনসংখ্যার এই শহরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল এই শহর যাতে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে জন্য এই প্রকল্প থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমেও সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, নতুন ঢাকার বেশির ভাগ ভবন জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। আর পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ভবনও অনেক পুরোনো। ফলে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকাই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে।
মাহমুদ আলী আরও বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টিকে যুক্ত করেছে। ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন অনুমোদন করা হয়েছে। ভূমিকম্প মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ বিশ্বে অগ্রবর্তী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে তিনি আশা করেন।
বিশ্বব্যাংকের ভূমিকম্প প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী রাজধানীর ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক কার্যক্রমের ইতিহাস তুলে ধরেন। ঢাকায় ৭ থেকে ৭ দশমিক ৩ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে বেশির ভাগ ভবন ভেঙে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভবনগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ক্রিস্টিনা ই কিমস বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ বিশ্বে ইতিবাচক পরিচিতি তৈরি করেছে। এখন বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের মতো মারাত্মক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে ঢাকা, তুরস্কের ইস্তাম্বুল, জর্ডানের আম্মান, ভারতের মুম্বাই, ফিলিপাইনের ম্যানিলার ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে। পরবর্তী সময়ে এই শহরগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধে বিনিয়োগ করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াজেদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প দলনেতা ড. ফুয়াদ বেন্দিমেরাদ ও উপদলনেতা মেহেদী আনসারি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
http://www.prothom-alo.com