দাগি নাটাবটের
দাগি নাটাবটের বা নাগরবাটই, কোয়েল-বটের বা পাতি লাওয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Turnix suscitator) (ইংরেজি: Barred Buttonquail), Turnicidae (টার্নিসিডি)গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Turnix (টার্নিক্স) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির ছোট ভূচর পাখি। দাগি নাটাবটেরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সতর্ক তিতির (লাতিন: coturnix = তিতির, suscitator = সতর্ক)। এরা বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি এবং বিরল । এদের বাংলাদেশের ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় । আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্তবলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এই প্রজাতির অবস্থা সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য নেই । বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
দাগি নাটাবটের ছোট ভূচর পাখি । স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে বেশি রঙিন, পুরুষ পাখির পিঠ লালচে বাদামি ও কালো, ডানা পালক ঢাকনিতে খাড়া । থুঁতনি ও গলা সাদাটে, বুক ও ঘাড়ের পাশে পীতাভ ও কালো ডোরা থাকে । স্ত্রী পাখির থুঁতনি, গলা ও বুকের ঠিক মাঝখানে কালচে, বুকের পাশ ও তলদেশে কালো ও পীতাভ ডোরা থাকে । উভয় পাখির চোখ সাদা বা হলদে । পা ও পায়ের পাতা সিসার মতো ধূসর ।
এদের মা-পাখি স্বভাবে বহুগামী । জুটি বাঁধে । বাসা গড়ে মাটির ওপরেই । ডিম পাড়ে চারটি । এরপর পুরুষ পাখিটিকে ডিমে বসিয়ে দিয়ে আবারও চলে যায় নতুন সঙ্গীর খোঁজে । আবারও বাসা, আবারও ডিম । স্থায়ী জুটি বাঁধে না কারও সঙ্গে । ডিমে তা দেওয়া থেকে ছানাগুলোর লালন-পালনের সব দায়িত্ব বাবা-পাখির ।
ঝোপ, জঙ্গল, তৃণভূমি ও বনে এরা খুব সকাল ও শেষ বিকেলে বিচরণ করে । দলে এরা জোড়ায় থাকে । এরা মাটিতে হেঁটে ঝরা পাতা উল্টে খাবার খুঁজে খায় । সাধারণত একই জায়গায় দিনের পর দিন খাবার খেতে আসে । খাবারের তালিকায় আছে শস্যদানা, বুনোবীজ, উই পোকা, পিঁপড়া, বিভিন্ন পোকামাকড়, ঘাসফড়িং ইত্যাদি ।
প্রজনন সময়ে ঘাস দিয়ে ছোট করে মাটিতে ঝোপের কাছে বাসা করে ডিম দেয় । ডিম পাড়ে চার-পাঁচটি । ডিমের রং ধূসর সাদা, তাতে লালচে বা কালচে বেগুনি আঁচ থাকে । ডিম থেকে ছানা ফুটতে ১২ দিন সময় লাগে । ছানারা এক ঘণ্টার ভেতরই বড় পাখির সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে ।