'দৈত্যাকার গহ্বর'- পৃথিবীর শেষ কি এখানেই!!

মাহবুব রেজওয়ান সানি

সমস্ত সৃষ্টিজগত যেন এক রহস্যের ধূম্রজালে আবৃত। একের পর এক রহস্যের সমাধান করে মানুষ জানা-অজানার নতুন নতুন অধ্যায় রচনা করে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের সৃষ্টি, উৎপত্তি ও চারপাশ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। একটু চোখকান খোলা থাকলে সম্প্রতি এমনই একটি রহস্যময় খবর আপনার চোখে পড়ার  কথা! গেলো সপ্তাহে রাশিয়ার ইয়ামাল পেনানসুলায় হঠাৎ করেই বিশাল এক গর্ত বিজ্ঞানীদের নজরে আসে। রাশিয়ার এই অঞ্চলটিকে বলা হয় পৃথিবীর শেষ প্রান্ত! হলই বা পৃথিবীর শেষ প্রান্তে একটি গর্ত! তাতে এতো মাতামাতির কি আছে! কিন্তু আপনি যখন শুনবেন গর্তটির মুখের পরিধি প্রায়  ২৬০ ফুট, তখন বিজ্ঞানী না হলেও সাধারণ পাঠক হিসেবেই আপনার মনে হাজার প্রশ্ন এসে ভিড় করতে বাধ্য।ho-1

একজন পাইলট সাইবেরিয়া অঞ্চল দিয়ে উড়ে যাবার সময় তার চোখেই সর্বপ্রথম এই বিশাল গর্তটি চোখে পড়ে। এমন একটি বিশাল গর্ত তৈরি হবার কারণ কি হতে পারে? যার মুখের পরিধি প্রায় আড়াইশ ফুট , না জানি তার আয়তন কত হবে! গর্তটি কতো গভীর হতে পারে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো কিছু জানাতে পারেন নি। গর্তটি কিভাবে তৈরি হতে পারে, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব সামনে এসেছে। অনেকে এর পিছনে এলিয়েনদের হাত আছে বলেও মনে করছেন। আরেকটি তত্ত্ব বলছে, সম্ভবত গ্রহাণুর আঘাতে এমনটা হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীদের একটি দল বলেছে, গ্রহাণুর আঘাতে এতো বড় গর্ত তৈরি হতে গেলে গ্রহাণুটিকে বেশ বড় আকারের ও সেই সাথে প্রচণ্ড গতি সম্পন্ন হতে হবে। আর এতো বড় ও উচ্চগতি সম্পন্ন গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করলে বড় রকমের ভুমিকম্প হত। যার প্রমাণ বিজ্ঞানিরা এখনো পাননি। গ্রহাণু বা উল্কা এর পিছনে দায়ী কিনা, এটা হয়তো সময় বলে দিবে। তবে এটাও সত্য,  রাশিয়ার এই অঞ্চলে উল্কাপাতের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।ho-2

সিডনি থেকে বিজ্ঞানীদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে বুধবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। তারা এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করছেন।এই এলাকার কাছেই একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন মাটির নিচে গ্যাস, পানি ও লবণের মিশ্রণে কোনো বিস্ফোরণ ঘটার কারণে তৈরি হয়েছে এই গর্ত। ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ তাদের প্রকাশিত সংবাদে ‘পিঙ্গো’ নামক একটি বিশেষ তত্ত্বের কথা উল্লেখ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের পোলার সায়েন্টিস্ট ডক্টর ক্রিস ফগউইলের মতে, এই গর্ত তৈরি হয়েছে মূলত পিঙ্গোর কারণে। পিঙ্গো হলো মেরু এবং এর কাছাকাছি অঞ্চলের এক ধরনের বরফের স্তূপ যা মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকে। পিঙ্গোর আকৃতি যদি বেশি বড় হয় এবং এটা যদি গলে গিয়ে থাকে, তবে এই ধরণের বিশাল গর্ত সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। Russia Siberia Crater

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ ডেভিড উইলশের মতে,গর্তের কিনার ঘিরে যে জঞ্জাল দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় মাটির নিচ থেকে কোনো ধরনের বিস্ফোরণে এটা তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলটি ভূকম্পনপ্রবণ এলাকা নয়। এটা পকেট আকারে সঞ্চিত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ফোরণে তৈরি হতে পারে।

বর্তমানে এই রহস্যময় গর্তের রহস্য উদ্ধারে ইয়ামাল কর্তৃপক্ষ, রাশিয়ার সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব দ্য আর্কটিক ও ক্রায়োস্ফিয়ার ইনস্টিটিউট অব দ্য অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকেরা কাজ করছেন। হয়তো অচিরেই এই রহস্যের জট খুলতে পারবেন তারা।

সিনিয়র এডিটর

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics