নদী থেকে বালু ও মাটি বিক্রি হুমকির মুখে দু’টি বড় ব্রিজ : বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা

শরীয়তপুর, কুমিল্লা ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রি হচ্ছে। এরফলে হুমকির মুখে রয়েছে দুটি বড় সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া বর্ষাকালে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে।

শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরে পদ্মার শাখা ও কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর ও সদর উপজেলার রাজগঞ্জ ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে। এর পাশাপাশি এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।image_52_9958

কার্তিকপুর এলাকার জামাল মিয়া ও মোসাদ্দেক আলী জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ভেদরগঞ্জ ভায়া ডামুড্যা নদীপথে পদ্মার শাখা নদীতে কার্তিকপুর বাজারের পূর্ব-দণি পাশে পদ্মার শাখা নদীর ওপর বড় ব্রিজের উত্তরে এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে দুই মাস ধরে মহিউদ্দিন ঢালী নামে প্রভাবশালী ব্যক্তি নদীর তীর থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছেন। একইভাবে ড্রেজার দিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কার্তিকপুর, রামভদ্রপুর, মধুপুর এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু ব্যবসায়ী বালু উত্তোলন করছে।

নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার, বাংলা বাজার,স্বর্ণখোলা এলাকায় জাহাঙ্গীর বেপারী, মাহবুব বালী, নিজাম, রেজাউল করিম ও রোমান মোল্যা পদ্মার শাখা নদী থেকে ড্রেজিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীরা। এভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।

অপর দিকে কীর্তিনাশা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনের ফলে কীর্তিনাশা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশপাশের বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিগ্রস্ত এলাকাবাসীর জমিজমা ও বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়লেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছেন না। নদী থেকে বালু উত্তোলন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা কোনো আইনের তোয়াক্কাই করছে না। ফলে কার্তিকপুর বাজারের পূর্ব পাশে পদ্মার শাখা নদীর ওপর কার্তিকপুর বড় ব্রিজ ও সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর ওপর রাজগঞ্জ বড় ব্রিজের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনো সময় ব্রিজ দু’টি পিলার ধসে বড় ধরনের তির আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের লোকেরা জেনেও না জানার ভান করছে।

ড্রেজার চালক সোহাগ বলেন, এ ড্রেজারগুলো নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার এলাকার জাহাঙ্গীর বেপারী, বাংলা বাজারের রোমান মোল্যা, মাহবুব বালী, রেজাউল করিম ও নিজাম ভাড়া করে এনে প্রায় দুই মাস যাবৎ নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।

ড্রেজার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বেপারী বলেন, আমাদের এলাকায় যারা ড্রেজিং করছে কেউ সরকারি অনুমতি নেয়নি। আমিও নিইনি। ড্রেজার ব্যবসায়ী নিজাম বলেন, স্থানীয় সুরেশ্বর ফাঁড়ির দারোগার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ড্রেজিং করছি। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস বলেন, বহুবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করে ড্রেজার বন্ধ করে দিয়েছি। আবার তারা নতুন করে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভেঙে পড়ছে রামপ্রাসাদের চরসহ কয়েকটি গ্রাম।

সূত্র জানায়, মেঘনা ও সোনারগাঁ উপজেলার মাঝ নদীর ইজারা নেয় সেলিনা গ্রুপ। কিন্তু তারা ওই নির্ধারিত স্থান ফেলে এসে চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রাসাদেরচর গ্রাম বরাবর নদী থেকে ১০-১৫টি ড্রেজার দিয়ে দীর্ঘ দিন বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে ইউনিয়নের রামপ্রাসাদেরচরসহ কয়েকটি গ্রামের বহু মানুষ নিজেদের কৃষি জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে পথে বসেছে। অন্যরা বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিনযাপন করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ও বাড়িঘর রক্ষা করা যাবে না। গ্রাম থেকে তিন-চার হাজার ফুট দূরে নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ইজারা দিয়েছে সরকার। কিন্তু রামপ্রাসাদেরচর থেকে ২০০-৩০০ ফুট দূরে নদী থেকে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা জানান, দায়িত্বশীল কর্তৃপরে যথাযথ পর্যবেণ ও তদারকি না থাকার সুযোগে কোনো নিয়মনীতির পরোয়া না করে অবৈধভাবে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর পাড় কেটে মাটি ও বালু বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বর্ষা মওসুমে এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া ছাড়াও হুমকির মুখে পড়বে কয়েকটি স্থাপনা।

পাঁচবিবি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী এখন ধু ধু বালুচর ও ধান তে হলেও বর্ষার ভরা মওসুমে হয়ে ওঠে প্রমত্ত। শুকনো মওসুমে এ নদীর ৮-১০টি স্পট থেকে হাজার হাজার ট্রাক বালু কেটে বিক্রয় করে বালু ব্যবসায়ীরা। এসব বালু উত্তোলনের জন্য নিয়মনীতি ও শর্ত থাকলেও এ েেত্র কোনো পরোয়া না করে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে বিক্রি করছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন পাঁচবিবি পৌরভবন ও পৌরসভা নির্মিত শ্মশানঘাটসংলগ্ন এলাকা থেকে নদীর প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু পাড় কেটে দেদার বালু ও মাটি বিক্রি করে চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও বালু কাটার ফলে বর্ষায় ভর মওসুমে খনন এলাকায় প্রচণ্ড পানির চাপে সদ্যনির্মিত শ্মশানঘাট, নির্মাণাধীন পৌরভবন ও পাঁচবিবি-হিলি সড়ক ভফুনের কবলে পড়তে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত গদাইপুর গ্রাম সামান্য বন্যাতেই প্লাবিত হবে বলে ধারণা করছেন গ্রামবাসী। এ ব্যাপারে পাঁচবিবি উপজেলা এসি ল্যান্ড জানান, ইজারার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে ইজারার শর্ত অনুযায়ী বালু ব্যবসায়ীরা শুধু নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন করতে পারবে। নিজের জমি হলেও পাড় কাটা অবৈধ।

সূত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত (২০/০৫/২০১৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics