নাইক্ষংছড়িতে বন্য হাতি হত্যা করে মাথা লুট !!
মাহবুব রেজওয়ান
আগেকার যুগে রাজা বাদশাহদের আস্তাবল পূর্ণ থাকতো হাতি-ঘোড়াতে। বিশেষ করে হাতির ছিল আলাদা কদর। যুদ্ধে যাওয়া, কোথাও ভ্রমনে যাওয়া, এমনকি শিকার করতে গেলেও রাজারা হাতির পিঠে করেই যেতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই রাজাদের শাসনও নেই, নেই রাজসিক হাতির চলন। হাতির সংখ্যা কমতে কমতে এখন হাতে গোনা সংখ্যায় চলে এসেছে আমাদের দেশে। এরপরেও যা দেখা যায়, তা সিলেট অঞ্চল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়। কিন্তু শিকারিদের দৌড়াত্ত এতোটাই বেড়ে গেছে , বাকি হাতিদের রক্ষা করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার, বান্দারবানের নাইক্ষাংছড়ি উপজেলার ফুলতলি গ্রামের গহীন অরণ্যের আফাছইন্না ঝিরিরি পাহাড়ে একটি মস্তকবিহীন বন্যহাতির দেহ পাওয়া গেছে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আরিফ উল্লাহ গহীন বনে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির দেহটি দেখতে পান। তার মতে, পরিকল্পিতভাবে গত দুই থেকে তিন দিনের মাঝে হাতিটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গ্রামবাসীরা জানান, মায়ানমার সীমান্ত মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় সে দেশের লুনটিন বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই ফুলতলি গ্রামে প্রবেশ করে। এমনকি গত সপ্তাহেও ওই বাহিনীর কিছু লোক এখানে প্রবেশ করে। তারাও হত্যা করে থাকতে পারে হাতিটিকে। হত্যার পর পাচারের উদ্দেশে মাথাটি কেটে নিয়ে যায় তারা। স্থানীয় লোকজন আরও জানায়, শিকারিদের দৌড়াত্ত ইদানিং অনেক বেশি। এটা তাদের কাজও হতে পারে।
লামা বন বিভাগের কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইদ আলী গুলি করে বন্যহাতি হত্যার ঘটনাটি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অপরাধীদের শনাক্ত করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি) ও বন বিভাগের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে নেমে পড়েছেন। কিন্তু অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাদের সাহস আরও বেড়ে যাবে।
আমাদের মাঝে এমনিতেই বন্যপ্রাণী বিষয়ক সচেতনতা অনেক কম। তাছাড়া প্রতিবছর বন্যহাতি লোকালয়ে খাবারের খোঁজে ঢুকে পড়লে স্থানীয় জনগনের হাতে মারা যাচ্ছে, না হয় আহত হচ্ছে। শিকারিদের দৌড়াত্ত যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে হয়তো ‘বাংলাদেশের হাতি’ রূপকথার গল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে খুব বেশি দিন লাগবে না।