নিস্তব্ধ নায়াগ্রা!!!
হুমায়েরা হেদায়েত স্বর্ণা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার নায়াগ্রা জলপ্রপাত তার বিশাল জলরাশির গর্জন ও বৃহদায়তনের কারণে পৃথিবীখ্যাত। এই তর্জন-গর্জন মিশ্রিত বিশাল জলরাশির বুকে যখন নিস্তব্ধতা নেমে আসে, সেটা যেনো অতি প্রাকৃতিক রূপ ধারণ করে!!
সম্প্রতি উত্তর আমেরিকায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি জমে এই অতি প্রাকৃতিক রূপ ধারণ করেছে! শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যাওয়ায় জলপ্রপাতের পানি জমে বরফ হয়ে যায়। এই ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনাটি মনোমুগ্ধকর নায়াগ্রাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের নিকট অদ্ভুত রূপে উপস্থাপন করেছে। প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা আলোকচিত্রীদের কাছে হিমায়িত নায়াগ্রা যতই মনোমুগ্ধকর ও আশ্চর্যের ঘটনা হোক না কেনো, আবহাওয়াবিদদের কাছে এটা নিতান্তই স্বাভাবিক। তাদের মতে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে বরফ মনে হলেও , বরফের স্তরের নীচ দিয়ে পানি বহমান।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন তিনটি জলপ্রপাত নিয়ে গঠিত। জলপ্রপাত তিনটি হলোঃ কানাডিয়ান জলপ্রপাত (১৬৭ফুট উঁচু ও ২৬০০ফুট চওড়া), আমেরিকান জলপ্রপাত (১৭৬ফুট উঁচু ও ১৬০০ফুট চওড়া) ও ব্রাইডাল জলপ্রপাত। বসন্তের শেষের দিকে বা গ্রীষ্মকালের শুরুতে জলপ্রপাত গুলো থেকে সেকেন্ডে ২০২,০০০০ ঘন মিটার পানি পতিত হয়। পানির এই অত্যধিক চাপে নায়াগ্রা তার প্রবাহ সম্পূর্ণ ভাবে থামাতে পারে না। তথাপি, মেরু ঘূর্ণির সময় পড়ন্ত পানি এবং কুয়াশা মিলে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ও নদী তীরবর্তী জায়গায় প্রায় পঞ্চাশ ফুটের মতো বরফ তৈরি হয়। শীতকালে যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য যথেষ্ট ঠান্ডা পড়ে, তাহলে এই বরফের আচ্ছাদন সম্পূর্ণ নদী জুড়ে প্রসারিত হয়; যা ‘আইস ব্রিজ’ নামে পরিচিতি।
১৮শতকের দিকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। ১৮৪৮ সালের মার্চ মাসে বরফের কারনে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ৪০ ঘন্টা পর্যন্ত কোনো পানি পড়েনি। লোকাল রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮৮৮ সালে প্রায় ২০,০০০ মানুষ সেখানে গিয়েছিল এবং মজার বিষয় হল, আইস ব্রিজের উপর দিয়ে তারা স্কেটিং ও স্লেজিং করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল।
১৯১২ সাল পর্যন্ত আইস ব্রিজের উপর দিয়ে পর্যটকদের চলা-ফেরার অনুমতি ছিল। কিন্তু, ১৯১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী অনাকাঙ্খিত ভাবে আইস ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে কর্তৃপক্ষ সেখানে পর্যটকদের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মেরু ঘূর্ণি থাকা সত্ত্বেও- এটা যথেষ্ট ঠাণ্ডা না হওয়াতে আইস ব্রিজ গঠিত হয়নি। যা ছিল, আইস ব্রিজ প্রেমীদের নিকট চরম হতাশার। তবে হিমায়িত নায়াগ্রা আলোকচিত্রীদের কাছে কিছু চমকপ্রদ ছবি তোলার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়।
আইস ব্রিজ গঠন কিংবা হিমায়িত নায়াগ্রা প্রকৃতিতে নতুন কিছু নয়। এই পর্যন্ত সাতবার এই ঘটনা ঘটেছে। তবু যেন তা প্রতিবারই অদ্ভুত এক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীবাসীর নিকট হাজির হয়েছে।