পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ অপচয় রোধে ব্যবস্থা
জার্মানি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সেরা হতে চায়৷ ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ তবে এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে৷
কিন্তু রোদ না থাকলে, বাতাস না বইলে তখন কী হবে? তখন কি জার্মানদের বিদ্যুৎ ছাড়াই অন্ধকারে বসে থাকতে হবে? উত্তর হলো – না, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বড় ব্যাটারির মধ্যে জমা রাখা গেলে এমনটা ঘটবে না৷ গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বটে, কিন্তু পদার্থবিদ্যার ক্ষমতা এ ক্ষেত্রে কিছুটা সীমিত৷
তবে সৌর ও হাইড্রোজেন গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী উলরিশ সুবারব্যুলার ও তাঁর দল এই মুহূর্তে অন্য ধরনের এক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনী দিক হলো, যে বিদ্যুৎ জমা রাখা যায় না, তা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের আকারে এক কেমিক্যাল ক্যারিয়ার বা ধারক উৎপাদন করা৷ সেই শক্তি কিন্তু অনেক কাল ধরে জমা রাখা যায়৷”
এই প্রক্রিয়ার পোশাকি নাম ‘পাওয়ার টু গ্যাস’৷ স্টুটগার্ট শহরে তারই পরীক্ষা চলছে৷ এর আওতায় বিদ্যুতের সাহায্যে এক রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, যার নাম ‘ইলেক্ট্রোলিসিস’৷ পানিকে তার মৌলিক উপাদান – অর্থাৎ অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে ভাগ করা হয়৷ তারপর অক্সিজেনের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করা হয়৷ দুই উপাদানই প্রাকৃতিক গ্যাসের সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ গ্যাস স্টোভে যেমনটা দেখা যায়৷
পাশের গবেষণাগারে গ্যাসের এই প্রতিক্রিয়া ঘটে৷ এই প্লান্টের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সহজেই এই প্রক্রিয়া চালু বা বন্ধ করা যায়৷ মাত্র ১৫ মিনিটেই তা করা সম্ভব, যা একটা রেকর্ড৷ সাধারণ রাসায়নিক প্লান্টের এটা করতে আরও অনেক সময় লাগে৷ এই প্রক্রিয়াও তাদের আয়ত্তের বাইরে৷ অথচ ‘পাওয়ার টু গ্যাস’-এর ক্ষেত্রে এমন গতি সম্ভব৷ উলরিশ সুবারব্যুলার বললেন, ‘‘অতি মাত্রায় বিদ্যুৎ হলে দ্রুত সুইচ অন করা এবং বিদ্যুৎ কমে গেলে দ্রুত সুইচ অফ করা – এটা সম্ভব হতে হবে৷ যাতে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়৷ এমন সব প্রত্যাশা পূরণ করা এই সব প্রযুক্তির পক্ষে এখনো সম্ভব নয়৷ আমরা তাই ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে এর সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷”
‘পাওয়ার টু গ্যাস’ প্রক্রিয়ার আরেকটা সমস্যা হলো, মূল জ্বালানির অনেকটারই অপচয় ঘটে – প্রায় ৩০ শতাংশ৷ তবে শুনতে বেশি মনে হলেও গবেষকরা মনে করেন, এর বিকল্প হলো বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া৷ উলরিশ সুবারব্যুলার বললেন, ‘‘এটা অবশ্যই ভালো প্রচেষ্টা, কারণ তারা বিদ্যুৎ জমা রাখতে পারে না৷ অর্থাৎ অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অতিরিক্ত উৎপাদন করলে প্লান্ট বন্ধ করে দিতে হয়৷ কারণ সেই অতিরিক্ত বিদ্যুতের কোনো ব্যবহারই হয় না৷ কিছুটা অপচয় সত্ত্বেও অতিরিক্ত শক্তি রাসায়নিক ধারকের মধ্যে জমা রাখতে পারলে পরে তা কাজে লাগানো যেতে পারে বৈকি৷ আমরা সেটাই করছি৷”
পরীক্ষামূলক প্লান্টের বাইরে গ্যাসের একটা পুরানো ট্যাংক রয়েছে৷ এর একটা প্রতীকী দিকও আছে৷ প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন ও জমা রাখার অবকাঠামো এখনই প্রস্তুত রয়েছে৷ এর সাহায্যে আনুমানিক ১০ দিনের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব৷
‘পাওয়ার টু গ্যাস’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা এক ধাপে অনেকটা বাড়ানো সম্ভব৷ জার্মানিতে এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারলে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার উপর আর বেশি নির্ভর করতে হবে না৷
সূত্র এবং কৃতজ্ঞতাঃ http://www.dw.de/