পরিবেশ কর্মী কবি শাহেদ কায়েসের অপহরণকারীদের অনতিবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই- পবা
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র নারায়নগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী কবি শাহেদ কায়েস বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ স্থানীয় সকল সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। গত ২৫ জুলাই ২০১৩, বৃহস্পতিবার শাহেদ কায়েসকে বালু সন্ত্রাসীরা হত্যা চেষ্টায় অপহরণ করে ও মারাত্মকভাবে জখম করে। সাংবাদিক ও সুভাকাঙ্খীদের তৎপরতায় মেঘনা ও সোনারগাঁ থানার পুলিশ অপহরণের প্রায় ৩ ঘন্টা পর তাকে রামপুর বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়। ঐদিন রাতেই সোনারগাঁ থানায় ৬জনকে আসামি কওে মামলা করা হয়। একজনকে গ্রেফতার করলেও মূল হোতারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কবি শাহেদ কায়েসের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এখনও সে হুমকিমুক্ত নয়। আমরা মনে করি শাহেদ কায়েস উপর হামলা সমগ্র পরিবেশ কর্মীর উপর হামলার সামিল। অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে এমন দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক যাতে আর কোন দুর্বৃত্ত এমন ধৃষ্টতার সাহস না করে। আজ ৩০ জুলাই ২০১৩, মঙ্গলবার, সকাল ১০:৩০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। উপস্থিত ছিলেন পবার সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, নির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত, কবি নিশাত খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়- নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলাধীন মেঘনানদী বেষ্ঠিত দুটি চর নুনেরটেক-মায়াদ্বীপ। সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ঘাট থেকে নদী পথে ট্রলারযোগে ৪০ মিনিটের নদীপথ মায়াদ্বীপ-নুনেরটেক। নুনেরটেক চর ২০০ বছরে প্রাচীন একটি চর। এখানে অত্যন্ত অবহেলিত জনগোষ্ঠী জেলে সম্প্রদায়ের প্রায় ১২ হাজার লোকের বাস। মায়াদ্বীপে কোন স্কুল নেই, হাসপাতাল নেই, বিদ্যুৎ নেই, মানুষের জীবিকার একমাত্র পথ মাছ ধরা। ২০০৭ সালে শাহেদ কায়েস সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন থেকে “মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা” গড়ে তোলেন এবং দ্বীপে তিনি বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা জেলেদের অধিকার ও চরের পরিবেশ নিয়ে কাজ করে আসছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে গত সাড়ে ৩ বছরে মায়াদ্বীপের প্রায় একদশামাংশ এবং ২০১১ সালে এক রাতেই প্রায় ৪০ বিঘা আবাদী জমি নদী গর্ভে হারিয়ে যায়। সোনারগাঁ ও মেঘনা থানার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহল বিশেষ করে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের দলীয় লোকজন বালু সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত থাকে। তাদের দ্বারা চরবাসী গত সাড়ে ৩ বছর যাবৎ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। এ পর্যন্ত শাহেদ কায়েসসহ চরবাসীর বিরুদ্ধে ৭ টি মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে চরবাসীর জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য- চর কাটতে না দিলে মাছ ধরতে দিবে না। এই নিপীড়িত ১২ হাজার মানুষের বসতভিটা জীবন জীবিকা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য শাহেদ কায়েস তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে তিনি তৎকালীন নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসক শামসুর রহমানকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি সরেজমিনে দেখে শাহেদ কায়েসকে প্রধান সমন্বয়কারী করে এবং ২১ জন চরবাসীকে কমিটির সদস্য করে “মায়াদ্বীপ নুনের টেক অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ কমিটি” গঠন করে দেন। বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চরবাসী শাহেদ কায়েসের নেতৃত্বে¡ প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এছাড়া ২০১১ সালে শাহেদ কায়েস বাদী হয়ে দ্বীপ রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন, মহামান্য আদালত চরবাসীর পক্ষে রায় দেন এবং “নুনের টেক বালু মহালে” স্থগিতাদেশ জারি করেন।
২০১০ সালে সংসদে বালু নীতি একটি বিল পাশ হয়েছে এবং তা গেজেঁটভূক্ত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে কোন জনপদ গুরূপ্তপূর্ন স্থাপনা ও ব্রিজের ১.৫ কি: মি: মধ্যে কোন ধরনের বালু কাটা যাবে না। সেখানে খুবই বিষ্ময়ের ব্যাপার নুনেরটেক বালু মহলে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ডিসি কর্তৃক বালু উত্তোলনের বিরূদ্ধে কমিটি গঠন করে দেওয়ার পরও চর ঘেষে বালু উত্তোলন গত ৩ বছর যাবৎ অব্যাহত হয়েছে। যা স্পষ্টত আদালত অবমাননার শামিল।
কবি শাহেদ কায়েস অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায় ও পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলায় স্বার্থান্বেষী মহলের বিরাগভাজন হন। গত ২৫ জুলাই ২০১৩, বৃহস্পতিবার মায়াদ্বীপ ও রামপ্রসাধের চরের স্কুল পরিদর্শনের জন্য যাওয়ার পথে বৈদ্যের বাজার থেকে কিছুটা দূরে মেঘনা নদীর মাঝে শাহেদ কায়েসকে বালু সন্ত্রাসীরা অপহরন করে নিয়ে যায়। পরে হত্যার উদ্যেশ্যে বেপরোয়াভাবে মারধর ও দেশীয় অস্ত্র চাপাতি দিয়ে বাম হাতের কব্জা ও কাঁধে আঘাত করে ও গুরুতর জখম করে। কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার রামপুর বাজার থেকে মেঘনা ও সোনারগা থানার পুলিশ অপহরণের প্রায় ৩ ঘন্টা পর তাকে উদ্ধার করে।
পবা’র দাবীসমূহ-
১. অপহরণকারী বালু সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
২. কবি শাহেদ কায়েস ও আন্দোলনকারী এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা নি:শর্তভাবে প্রত্যাহার করা
৩. সরকারীভাবে তার সমন্ত চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন ও পরবর্তীতে দোষীদের কাছে থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা
৪. অবৈধ বালু সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান
৫. সরকারিভাবে একটি তদন্ত কমিটি করে অপহরণ ও বালু উত্তোলনের সুষ্ঠু তদন্ত করা
৬. বালু সন্ত্রাসীদের সরাসরি মদদ দেয়ার জন্য এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা বানোয়াট মামলা গ্রহণের জন্য মেঘনা থানার ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।