পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

জহিরুল হক মাখন

যে মহত্ উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সেই লক্ষ্য নিয়ে কেউ খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন বলে মনে হয় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ বিষয়ক একাধিক আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতৃত্ব দিয়ে পরিবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। যেমন- কানকুন সম্মেলনসহ বিভিন্ন ফোরামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তিনি গড়ে তুলেছেন জলবায়ুর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ দানে বিশ্বের পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্টকারী ধনী দেশগুলোকে চাপ প্রয়োগ করতে। অনেকখানি সফলও হয়েছেন এ আন্দোলনে। যারা কার্বন ছড়িয়ে, তেল গ্যাস পুড়িয়ে নিজেদের ভোগবাদী জীবন-যাপনে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন আমাদের মতো দেশগুলোর, তারা কেন ক্ষতিপূরণ দেবেন না? এই যৌক্তিক আন্দোলন দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।ecotourism1

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই চিত্র থেকে যদি চোখ ফিরাই নিজের দেশের দিকে? নিশ্চিত হতাশ হবো আমরা। কারণ আমাদের আবহাওয়া, জলবায়ু আমরা প্রতিদিন ধ্বংস করে চলেছি। কিছুতেই আত্মঘাতি এই প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথবা কোনো সরকারই এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না? এই কেন-র জবাব চাওয়া যাবে পরিবেশ যারা নষ্ট করছে তাদের সামাজিক পরিচয়েই।

ধরা যাক বৃক্ষ নিধনের কথাই। আমারে এক সময় বিশাল বনভূমি ছিল। দিনের পর দিন বন বিভাগের রাঘব বোয়ালদের সহযোগিতায় আর যখন যারা ক্ষমতায় তাদের সমর্থক সন্ত্রাসীদের যোগসাজশে সরকারি গাছ কেটে বনভূমি বিরান করে দেয়া হয়েছে। এখনও কি বন্ধ আছে? সুতরাং পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়েছে। আবাসিক এলাকায় যেটুকু বাগান ছিল, দিন দিন তা শেষ হচ্ছে। বাগান কেটে, আবাদী ফসলের মাঠ কেটে নিয়ে, খাল ভরাট করে হচ্ছে বহুতল বাড়ি। ধুমছে চলছে হাউজিং ব্যবসা। কারা ব্যবসায়ী। ক্ষমতার কাছের মানুষ তারা। সব সময় প্রভাবশালী। অর্থবিত্ত আর দুর্নীতির কালো টাকা তাদের শক্তি। তাই নদী দখল শেষে এখন কেউ কেউ সাগর দখলেও মনোযোগ দিচ্ছে। এ এক সব সম্ভবের দেশ। সুতরাং পরিবেশ কে বাঁচাবে?

ইট ভাটায় এখনও পুড়ছে গাছ। কাঠের ব্যবসার নামে হরিরলুট যেন। আর নগরীর জনস্বাস্থ্য? সে-তো বর্জ্যের কবলে এখন। এতো ক্লিনিক, এতো কল-কারখানা, অথচ বর্জ্য যথাস্থানে ফেলার ব্যবস্থা নেই। জনসংখ্যার ভারে ন্যূব্জ ঢাকায় এখন পরিবেশ রক্ষার কথা যেন কারও ভাবনাতেই আসছে না। বড় জোর ৩০ লাখ লোক বাস করতে পারে এখানে। কিন্তু বসতি গেড়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ। তার ওপর খাল নেই, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। দূষিত বর্জ্য নিঃশেষ করার ব্যবস্থা নেই। মেডিক্যাল বর্জ্য, পচা চামড়ার বর্জ্য, রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে মানুষের বিপুল সম্ভাবনা। শিশুরা জন্মের পরই নানা রোগ-জীবাণুর মধ্যে বেড়ে উঠছে। শিশুদের ভবিষ্যত্ অন্ধকার। রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে মারাত্মক দ্রুততায়। সুতরাং এখনই পরিবেশ রক্ষার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।

নগরীর ঘর-বাড়ির ছাদে এবং চারপাশে গাছপালা বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। গ্রামে প্রতিটি পরিবারে গাছপালা, ফলদ বৃক্ষ লাগানোর সামাজিক উদ্যোগ নিতে হবে। নদী, খাল ও জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার ও রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই। রক্ষক যেন ভক্ষক হতে না পারে। তা হলেই পরিবেশ দিবস পালনের সার্থকতা। তা না হলে এসব আনুষ্ঠানিকতা বার্ষিক বাড়তি অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

লেখন: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
E-mail: makhon 1966@yahoo.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics