পাখিখেকো আটপেয়ে !!!!

মাহবুব রেজওয়ান

সবুজ গ্রহ পৃথিবী বৈচিত্র্যময় বলেই হয়তো এতোটা সুন্দর। সব কিছুই যদি একরকম হতো, তাহলে বোধহয় আমাদের কাছে একঘেয়ে লাগত। এই কারণেই হয়তো আমরা কেউ ভালো, কেউ মন্দ। কেউ চঞ্চল, আবার কেউ বা গম্ভীর। আর প্রাণীজগতের কথা যদি বলি, তাহলে বোধহয় কথা কখনোই ফুরাবে না। চোখে দেখা যায় না, এমন প্রাণী যেমন আছে তেমনি রয়েছে বিশালাকায় হাতি। আবার কখনো দেখা যায় একই প্রজাতির মধ্যে কেউ বামন, আবার কেউ দীর্ঘকায়।

মাকড়শাদের মধ্যেও এর বেতিক্রম নেই। টারান্টুলা মাকড়শাকে সাধারনত সব থেকে বড় প্রজাতির মাকড়শা বলে ধরা হয়। আকারের দিক থেকে, বিশেষ করে পায়ের আকারের কারণে মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বড় বড় মাকড়শা দেখা যায়। তবে আকার ও ওজনে সব থেকে বড় মাকড়শা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার  Theraphosa blondi বা T. blondi। এদের ওজন ৭ আউন্স বা ১৭০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। আকৃতিতে এরা মানুষের হাতের তালু থেকেও বড় হয়। T.blondi

আঠারশো শতকে কয়েকজন পর্যবেক্ষক দেখতে পান যে Theraphosa গণের মাকড়শা পাখি(হামিং বার্ড) পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। তখন থেকে Theraphosa গণের মাকড়শাদের বলা হতো ‘পাখি খেকো’।

এই নাম থাকা সত্ত্বেও T. blondi প্রজাতির মাকড়শাকে কিন্তু খুব একটা পাখি শিকার করতে দেখা যায় নি। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মাকড়শা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর গুস্তাভ হরমিগা বলেন, T. blondi প্রজাতির মাকড়শা সাধারণত আরথ্রোপোডা পর্বের প্রাণী বেশি শিকার করে থাকে। তিনি আরও বলেন, এই প্রজাতির মাকড়শা সাধারণত ভালো শিকারি এবং শিকার হিসেবে এরা যদি ছোট ইঁদুর বা গিরগিটি পেয়ে থাকে, তবে তাদেরকেও নিজেদের শিকারে পরিণত করে।

তবে এদের শিকার ধরার কৌশল কিছুটা ভিন্ন। এরা অন্যান্য মাকড়শার মতো জাল বুনে শিকার করে না। এরা সরাসরি শিকারকে আক্রমণ করে। শিকার করতে এরা এদের পা গুলোকে ব্যাবহার করে। তবে সবথেকে কার্যকরভাবে ব্যাবহার করে এদের মুখের সামনের দু’টি লম্বা সূচালো দাঁত। T. blondi প্রজাতির মাকড়শা এই দাঁত দিয়ে এদের শিকারের শরীরে বিষ প্রবেশ করিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে এদের শিকার নিস্তেজ হয়ে পরে। তবে গুস্তাভ হরমিগা জানিয়েছেন, এদের বিষ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এমনকি এদের কামড়ের কারণে ডাক্তারেরে নিকট চিকিৎসা নেয়ারও প্রয়োজন নেই। T. blondi মাকড়শা শক্ত খাবার খেতে পারে না। ইঁদুর বা গিরগিটি শিকার করলেও এরা এদের খাদ্যকে তরলীকৃত করে হজম করে। T.blondi2

অন্যান্য মাকড়শার মতো জাল বুনে বাসা তৈরি করে না T. blondi। এরা জঙ্গলে মাটির উপর ঘাস, লতাপাতার ভিতরে বাসা বানিয়ে থাকে। তবে এই বাসা মজবুত করতে এরা শক্ত সিল্কের জাল ব্যাবহার করে। এদের পা চুলের মতো আবরণে ঢাকা থাকে। যা অত্যন্ত সংবেদনশীল। গুস্তাভ হরমিগা এ সম্পর্কে বলেন, এদের পায়ের পশমগুলোকে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে দেখলে অনেকটা হারপুনের মতো দেখতে মনে হয়। যার মাথা এদের দেহের সাথে আটকে থাকে। আক্রমণের শিকার হলে T. blondi এদের সামনের দুই পা উঁচু করে রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকে।

স্ত্রী T. blondi একবারে ৫০ থেকে ১৫০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিমগুলো একটি বড় ঝিল্লী দিয়ে আবৃত থাকে। যা ডিমগুলোকে সুরক্ষা দেয়। ডিম ফুটে বের হওয়ার পর ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যায় এদের পরিণত হতে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত মায়ের সাথেই এদের জীবন কাটে। স্ত্রী T. blondi প্রায় ২০ বছর বেঁচে থাকলেও পুরুষ T. blondi মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর বেঁচে থাকে।

দক্ষিণ আমেরিকার অনেক অঞ্চলেই T. blondi কে সুস্বাদু খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। এদের স্বাদ নাকি অনেকটা চিংড়ি মাছের মতো।

তথ্য সূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics