পাবনায় উন্নত বীজে সরিষার বিপুল ফলন

সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ ও চাষিদের মধ্যে উন্নত জাতের সরিষা বীজ সরবরাহ করায় এ মৌসুমে পাবনা জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর উন্নত জাতের সরিষা আবাদের কারণে গতবছরের চেয়েও লাভবান হয়েছেন কৃষকরা।

মাঠে মাঠে সবুজ সরিষার সমারোহে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। বেশির ভাগ এলাকায় সরিষা কেটে রোদে শুকিয়ে মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। অল্প খরচের সরিষা চাষে এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দের জোয়ার বইছে চাষিদের মধ্যে।
shorisha
চাষিরা জানান, এ বছর বিঘা প্রতি গড়ে ৫ মণ হারে সরিষার ফলন হয়েছে। আর বর্তমান বাজারদর হিসাবে প্রতিমণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকায়। গত বছরের চেয়ে ভাল ফলন ও বাজারে দাম বেশি পাচ্ছেন তারা।

ঈশ্বরদী উপজেলার খয়েরবাড়িয়া গ্রামের সরিষা চাষি এন্তাজ মিয়া জানান,এ মৌসুমে ভাল সার,উন্নত বীজ থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে তার। তিনি ৫৭ শতক জমিতে ৩কেজি সরিষা বীজ রোপণ করেছিলেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল সাড়ে ৪হাজার টাকা। সময় লেগেছে আড়াই মাস। তিনি ৯মণ সরিষা পেয়েছেন। বিক্রি করেছেন ১৮হাজার ২শ’ টাকায়।

সুজানগর উপজেলার মনিকহাট ইউনিয়নের খয়রান গ্রামের এক চাষি বললেন,তিনি ২একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। আশা করছেন, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৩০মণ সরিষা পাবেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৬০ থেকে ৬৫হাজার টাকা।

সদর উপজেলার ধরবিলা গ্রামের এক কৃষক জানান, সেচ, সার, বীজ মিলিয়ে প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে খরচ হয়েছে ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা। এ হিসাবে তার আড়াই বিঘায় খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকার সামান্য বেশি। তিনি আড়াই বিঘায় ফলন পেয়েছেন ১৩ মণ। যার বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ২৬ হাজার টাকা।

শুক্রবার পৌর এলাকার হাজির হাটের বেপারী রাজ্জাক সরকার জানান, প্রতি মণ সরিষা তিনি কিনছেন ২ হাজার টাকা দরে। গত বছর প্রতি মণ সরিষা ছিল ১৬শ’-১৭শ’ টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার নয়টি উপজেলায় এবছর স্থানীয় ও উফসী জাত মিলে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয় ২৯ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। অপরদিকে সরিষা উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট ৩৫ হাজার ৫৩৮ টন। এর মধ্যে শুক্রবার (০১ মার্চ) পর্যন্ত ২৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমির সরিষা কাটা হয়েছে। সম্পূর্ণ কাটা শেষ হলে উত্পাদন জানা যাবে। ফলন দেখে ধারণা করা যায়, উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবিএম মোস্তাফিজার রহমান জানান,সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় এ বছর পাবনায় ভাল সরিষা উত্পাদিত হয়েছে। আগে কৃষকরা স্থানীয় জাতের সরিষার আবাদ করতেন। এবার কৃষকরা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের রিসার্চ করা উন্নত জাতের সরিষা (যেমন তরি-৭, বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-৯) আবাদ এবং সারের সুষম ব্যবহারের কারণে ভাল ফলন পেয়েছেন।

হরতালে ডিজেল সরবরাহে বিঘ্ন হুমকিতে বোরো আবাদ

আগামী ১৫ মার্চ বোরো আবাদের সময়সীমা শেষ হলেও হরতালে ডিজেল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে পাবনার বোরো আবাদ। চাহিদামত কৃষকরা সেচ দিতে পারছেন না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক সংকট। এ অবস্থায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জেলার নয় উপজেলার কৃষক।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে পাবনায় ৬৮ হাজার ৩৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১৭১ টন ধান।

পাবনার প্রধান ফসল বোরো আবাদের বেশির ভাগই ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে হয়। ডিজেল সরবরাহ হয় বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপো থেকে। কিন্তু হরতালে সেখান থেকে ডিজেলসহ কোন রকম তরল জ্বালানিবাহী লরি ছাড়া হচ্ছে না। সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি পুরনো মজুদও শেষের দিকে। এজন্য লিটারপ্রতি কৃষকদের বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। কৃষকের কথা,এমনিতেই কৃষি উপকরণের দাম চড়া, ধানের দাম আশানুরূপ পাওয়া যায় না, তার উপর হরতালে বেশি দামে ডিজেল কিনে সেচ দিলে লোকসানে পড়তে হবে। কৃষকদের আশঙ্কা, রবিবার থেকে টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে তাদের অবস্থা আরও নাজুক অবস্থায় পৌঁছাবে। হরতালের সময়সীমা যদি বেড়ে যায়, তাহলে ভোগান্তির আর কোন সীমা-পরিসীমা থাকবে না।

এদিকে দিনমজুর বা শ্রমিক না পাওয়ার কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার মালিগাছা গ্রামের কৃষক শাজাহান আলী জানান, প্রায় একযোগে সবাই আবাদে নেমে পড়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। দৈনিক দুইশ’ টাকা দিয়ে যে শ্রমিক পাওয়া যেতো এখন সেখানে ৩শ’ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।

http://ittefaq.com.bd/

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics