প্রকৃতির অনন্য স্বচ্ছ শীতল বিছানা… “ বিছনাকান্দি ”

মনজুর কাদের চৌধুরী

bichanakandi
বিছনাকান্দি,গোয়াইনঘাট,সিলেট।।ছবিঃ মনজুর কাদের

এক ঘন্টার টানা হন্টনে ক্লান্ত শরীর যখন বিছিয়ে দিলাম,মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্ণার স্ফটিকের ন্যায় ঝকঝকে শীতল পানিতে , ক্লান্তি অতিসুখে পরিণত হতে এক সেকেন্ডও লাগেনি।কিভাবে যে এক ঘন্টাখানেক হেটেছি, বুঝিইনি। চাইলে নৌকায়ও যেতে পারতাম কিন্তু এডভেঞ্চার প্রিয়দের নৌকায় বুঝি ভালো লাগে? ঝকঝকে শীতল পানির প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ে, বড় বড় পাথর আঁকড়ে ধরে শৈবাল হওয়া।  সামনে সবুজ ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড় । দুরের পাহাড়টা এতোই উঁচু, যেন মেঘ ছুয়েছে ।পাহাড়ের চূড়ো থেকে নামছে ঝর্না , মেঘকে ছুয়ে ফেলেছে। আর শব্দ !! যেন এক নায়াগ্রা!!

কি বিশেষণে বিশেষায়িত করবো??এতো আনন্দ আর কোথাও পাইনি। সবকিছু মিলেছে এখানে। জাফলং এর মতো স্বচ্ছ পানি ,পাথর আর পাহাড়ের মিলন । মাধবকুন্ডের মতো ঝর্ণা । কক্সবাজারের মতো জলের ঢেউ । শীতল মিষ্টি পানি । এ যেন অনন্য।

saiful
এ স্বচ্ছ,শীতল জল, দাও মোরে শয়ন।। ছবিঃসাইফুল ইসলাম

বর্ষার সময়ে স্বচ্ছ পানি খুঁজে পাওয়া আশ্চর্যজনকই বটে কিন্তু এ যে পাহাড়ি ঝর্নার পানি,সারা বছরই স্বচ্ছ,শীতল ।অসাধারণ রুপে লাবন্য সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার “বিছনাকান্দি”।

সিলেটের স্বর্গীয় বিছানা বলা যায়।

রাজধানী ঢাকা সহ যেকোন জেলা থেকে সর্বপ্রথম আপনাকে আসতে হবে প্রকৃতির অপরূপ হাতে সাজানো সিলেট শহরে। সিলেট শহরে ট্যুরিস্ট দের থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে।৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায়। নিরাপত্তাও ভালো আছে।দরগা গেটে কয়েকটি ভালো হোটেল আছে। যেহেতু সকালের যাত্রাটা আম্বরখানা থেকে, তাই দরগা গেটই ভালো হবে। তাই বর্ষার দিনে , গরম থেকে প্রকৃতির কোলে শান্তি পেতে চলে আসতে পারেন বিছনা কান্দি।

বিছানাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমান বন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি হাদার পার নামক জায়গায় পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভালো হয়। পাঁচ জন মিলে ৪০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে এ রুটে নিয়মিত সিএনজি চলে , ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা।

চারপাশে শুধু সবুজ চা বাগান।নীল আকাশ আর যেন সবুজ কার্পেটের উপরতা বুটা নিয়েছে। বিমানবন্দর পর্যন্ত এ রকম সুন্দর রাস্তা।সবুজের সমারোহ , পাহাড় , দূর থেকে দেখা সাদা রেখার ন্যায় মেঘালয়ের ঝর্না আর গ্রাম দেখতে দেখতে আপনি হাদার পার এসে পৌছাবেন। মসজিদের পাশেই আছে খেয়া ঘাট ।সুন্দর বেশ ভুষা দেখে মাঝিরা ২০০০ টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। ভাবখানা এমন রাখতে হবে যে আমরা হেটেই যেতে পারব। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হলে ভাল।দরাদরি করে এরচেয়ে কমে পেলে আরও ভালো । তবে এডভেঞ্চার প্রিয়রা হেটেই যায়। আগের রাতে যদি বৃষ্টি হয় তবে নৌকা নেয়াই ভালো । আর স্টেমিনা কম হলে ভুলেও হাটা ধরবেন না ।

সব সৌন্দর্যই উপভোগ করছি কিন্তু ছুতে পারছি না … সব যে ভারতে।।তবে দূর পাহাড়ই আপনাকে হাটাবে ।মেঘালয়ের টানেই আপনি হাটবেন…..যদি হেটে বিছানাকান্দি যান তাহলে আপনাকে এরকম কয়েকবার নৌকা দিয়ে পার হতে হবে।হাটতে হাটতে আমরা পৌছে গেলাম বাংলাদেশের শেষপ্রান্তে। বিজিবির একটি অফিস আছে একদম শেষ মাথায়।বিছানাকান্দি নামার আগে অবশ্যই তাদের সাথে পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে নিবেন।bichanakandi jhorna

তাঁদের দুঃখ , তারা ছুতে পারছে কিন্তু উপভোগ করতে পারছে না …

দুঃখের কিছু নেই , বারটা যদি হয় শুক্র কিংবা সোম , তাহলে কপাল খুলে গেছে। সকাল দশটা থেকে চারটার ভিতর যেতে পারবেন ভারতে ।। সীমান্ত হাট যে বসে। খেতে পারবেন ভারতী কাঁঠাল সহ ফলমূল ।

তবে সাবধান ফেনসিডিল দালালদের পাল্লায় যেন না পড়েন । ছোট্ট শিশুরা অফার করতে পারে। পা দিলে বিপদে পড়বেন কারণ কিছুক্ষণ পরপর বিজিবি চেকআপ হয়। আর সাতার না জনলে খুব সাবধান থকবেন। সাতার যারা জানেন তারাও সাবধান, প্রচন্ড স্রোতে আপনি পাথরের আঘাত পেতে পারেন, পাথরে ধরতেও সাবধান থাকবেন কারণ মাঝে মাঝে খুব পিচ্ছিল পাথর আছে ।।

আপনিও ঘুরে আসতে পারেন, তবে অনুরোধ খাবার দাবার নিয়ে , ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে প্রকৃতির এ অনন্যতা নষ্ট করবেন ন

monzur.sau@gmail.com

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics