
প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ বাবা'রা !!!
মাহবুব রেজওয়ান সানি
পৃথিবীতে বাবা শব্দটি কতোটা মধুর আর আবেগঘন বা বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কের গভীরতা কতোটা গাড় তা বাবা দিবসে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্ম মারফতে দৃষ্ট হয়েছে। পাঠক, প্রাণী জগতের রসায়ন কিংবা তাঁদের ভালবাসা আর মমতার বহিঃপ্রকাশের কি কোন মাধ্যম রয়েছে? তাঁরা কি আদতে বন্য ? নাকি তাদেরও রয়েছে বাবা কিংবা সন্তানের প্রতি মমতা? চলুন একটু দেখে নেয়া যাক, প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ বাবা’রা কেমন……
সিন্ধু-ঘোটকঃ
প্রাণী জগতে বাবাদের মধ্যে প্রথম স্থান দখলের প্রতিযোগিতা হলে সম্ভবত প্রথম সারিতেই থাকবে সী হর্স বা সিন্ধু-ঘোটক। একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে বাবা হিসেবে এদের স্থান উপরের দিকে না দিয়ে কোন উপায় নেই। আপনি জেনে অবাক হবেন, স্ত্রী সী হর্সের ডিম পাড়ার পর গর্ভ ধারণের কাজ কিন্তু পুরুষ সী হর্সই করে থাকে। এরা এদের বুকের থলিতে করে ডিম নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং ডিম ফুটে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত এরা সেই ডিমগুলোকে মায়ের মতোই বুকে আগলে রাখে।
দৈত্যাকার জলজ- শুঁয়োপোকাঃ
জায়ান্ট ওয়াটার বাগের শরীরের উপরের দিকে যে দানার মতো অংশ দেখতে পাচ্ছেন, তা কিন্তু এদের শরীরের কোন সাধারণ অঙ্গ নয়। আসলে, এটি এদের শরীরেরই কোন অংশ নয়। এটি একটি পুরুষ জায়ান্ট বাগ, যে কিনা একটি স্ত্রী জায়ান্ট বাগের ডিম পীঠে করে নিয়ে ঘুরছে। শুধু এখানেই শেষ নয়। আপনি যদি ভুলেও এই ডিমগুলোর ক্ষতি করার কথা চিন্তা করে থাকেন, তাহলে আপনাকে চড়া মূল্য দিতে হবে। কারণ, জায়ান্ট ওয়াটার বাগের কামড় কীট-পতঙ্গের মধ্যে সবথকে যন্ত্রণাদায়ক। আর তাই তো, এরা প্রাণীদের পিতৃজগতে অনন্য এক স্থান দখল করে রয়েছে।
ব্যাঙঃ
প্রাণী জগতের পিতাদের মাঝে আত্মত্যাগের এক অসাধারণ উদাহরণ হয়ে থাকবে ব্যাঙ। ব্যাঙের কিছু প্রজাতি লার্ভাগুলোকে নিজেদের মুখের ভিতরে রেখে দেয়, যতদিন না পর্যন্ত লার্ভাগুলো নিজেরা চলাচলের মতো যথেষ্ট বড় হয়। মুখের মধ্যে রাখার কারণ; লার্ভাগুলোর জন্য সঠিক তাপমাত্রা এবং নিরাপত্তা। সবথেকে অবাক করার মতো ব্যাপার হল, লার্ভা মুখে রাখার সময় প্রয়োজন হলেও এরা খাবার গ্রহণ করে না। এছাড়াও অন্যান্য কিছু প্রজাতি তাদের পায়ে, এমনকি চামড়ার ভিতরেও ডিম বহন করে থাকে।
মারমোসেটঃ
নারী মারমোসেট থেকে পুরুষ মারমোসেট অনেক বেশি দায়িত্বশীল হয় তার সন্তানের প্রতি। একদম ছোট থেকে দেখাশোনা করা, খাবারের যোগান দেওয়া থেকে শুরু করে এদের সন্তানকে পিঠে নিয়ে এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে বেড়ানোর মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সব কাজই পুরুষ মারমোসেট করে থাকে। ‘ইউনিভারসিটি অফ নেব্রাস্কা জু’ এর প্রাইমাটোলজির গবেষক জেফ ফ্রেঞ্চ বলেন, পুরুষ মারমোস্টের সন্তানের প্রতি এতো দায়িত্ববান হওয়ার প্রধান কারণ হল, সন্তান পালনে মায়েদের শারীরিক অক্ষমতা। কারণ, একটি ৫৫ কেজি ওজনের মা মারমোসেট প্রায় ১৪ কেজি ওজনের একটি সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে।
নেকড়েঃ
শিকারি হিসেবে নেকড়ে যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, পরিবারের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় পেলে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। নেকড়ে খুবই সামাজিক একটি প্রাণী। পুরুষ নেকড়ে তার সন্তানের প্রতি একটু বেশিই যত্নশীল। জন্মের পর থেকে কয়েক সপ্তাহ সন্তানের জন্য রীতিমতো পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় পুরুষ নেকড়ে। এছাড়া, সন্তানের খাবারের সমস্ত দায়িত্বও পুরুষ নেকড়ে নিজেই পালন করে। অন্যান্য প্রাণীর জন্য নেকড়ে যতই দুঃস্বপ্নের নামান্তর হোক না কেন, নিজের সন্তানের কাছে যেন ভালবাসা ও আস্থার এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি!