প্রকৃতির সবচেয়ে বড় লড়াইঃ এক মেয়েকে জয় করে নিতে চল্লিশ এর ও অধিক পুরুষের মরণপণ প্রতিযোগিতা

ছোট বেলায় আলিফ লায়লায় দেখেছি এক রাজকন্যাকে বিয়ে করতে অনেক বীরযোদ্ধাদের মধ্যে জীবন-মরণ যুদ্ধের প্রতিযোগিতা হত। যে বেঁচে থাকত সে রাজকন্যাকে পেত। অনেক মুভিতেই আছে এক মেয়েকে পাওয়ার জন্য অনেক পুরুষ যুদ্ধ করে মারামারি করে। এটা মানুষের মধ্যে আদিম কাল থেকেই ছিল কিন্তু তার ও অনেক পূর্ব থেকে এক মেয়েকে জয় করে নিতে চল্লিশ এর ও অধিক পুরুষের মরণপণ  লড়াই ও প্রকৃতিতে আছে যাকে প্রাণিবিজ্ঞানীরা প্রকৃতির সবচেয়ে বড় লড়াই ও প্রায় সময় বলে থাকেন। আর এই লড়াই বা প্রেমের যুদ্ধের প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে সাগরের এক বিশাল স্তন্যপায়ী প্রাণী হাম্প-বেক তিমির মধ্যে।  timi 3

 শীতকালে প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী বা মেয়ে তিমি বিভিন্ন শব্দ তৈরি করে এবং সাগরে নেচে পানির আলোড়িত করে পুরুষ তিমিদের আকর্ষণ করে প্রেমের আহ্বান জানাতে থাকে। মেয়ে তিমির এই প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয় পুরুষ তিমিরা তবে একটা বা দুটো নয় কোন কোন সময় চল্লিশের ও অধিক। মেয়ে তিমিটি এবার সামনের দিকে সাঁতার কেটে চলে যেতে থাকে আর তার পিছু নেয়ে সব পুরুষ তিমিগুলি। পুরুষ তিমিগুলি একে অপরের আগে আগে সাঁতারে মেয়েটির কাছে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমদিকে সব পুরুষদের মেয়ে তিমিটির পিছু পিছু এই সাঁতার অহিংস থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা সহিংসতায় রূপ নিতে থাকে।

মাত্র ঘণ্টা দুয়েক পরেই একে অপরকে শব্দ ও পানি ছুড়ে ভয় দেখাতে থাকে যাতে প্রতিযোগিতা থেকে সরে পরে। কিন্তু কেউ সহজে প্রেম বিসর্জন দিতে রাজী নয় তাই পানি ছুড়াছুড়ি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। সময়ের সাথে সাথে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে, প্রচণ্ড ধাক্কায় একে অপরকে গায়েল করার চেষ্টা করতে থাকে আর সাগরের বিশাল এলাকা জুরে তাদের তাণ্ডব লড়াই চলতে থাকে। লড়াইয়ের শেষ দিকে একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। অনেকেই আহত হয়ে রণে ভঙ্গ দেয়। আর এই লড়াই চলতে পারে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আর যুদ্ধের এই ময়দানের দৈর্ঘ্য হয় কয়েকশ মাইলেরও বেশী।

অবশেষে লড়াই একসময় থামে আর মেয়ে তিমিটির পাশে জায়গা করে নেয় একটি মাত্র প্রেমিক তিমি। মেয়েটি তাকেই মন দেয় কারণ এই তিমিটি ই হবে তার ভবিষ্যৎ সন্তানদের যোগ্য, বিজয়ী ও সাহসী পিতা যে দীর্ঘ সময়ের মরণপণ যুদ্ধে জয়লাভ করে তাকে পেয়েছে। নতুন এই প্রেমিক প্রেমিকা জুটির ভালবাসা চলতে থাকে তারা পাশাপাশি সাঁতার কাটতে থাকে আরও কিছুক্ষণ। চূড়ান্ত বোঝাপড়া হয়ে গেলে নব্য এই দম্পতি সাগরে ডুব দেয় একসাথে চলে যায় গভীর কোন এক নীরব স্থানে যেখানে তাদের মধুচন্দ্রিমা হয় আর প্রেমিকটির কাছ থেকে শুক্রাণু গ্রহণ মেয়েটি ডিম্বাণু নিষিক্ত করে। তার প্রায় এক বৎসর পর মেয়ে তিমিটি একটি সন্তান জন্ম দিয়ে সংসার আলোকিত করে। timi 2

হাম্প-বেক তিমির অজানা তথ্য:

১. এরা লম্বায় ৫০ ফিটের ও বেশী যা ৪তলা একটা বিল্ডিঙয়ের সমান আর ওজন ৪৫ টনের বা ৪৫,০০০ কেজির ও বেশী হয়।

২. পৃথিবীর প্রায় সব সাগরেই এরা বাস করে এবং উপকূলীয় এলাকাগুলিতে এদের বসবাস বেশী।

৩. প্রতি বছরই এরা একটা নির্দিষ্ট পথে শীতল পানি থেকে উষ্ণ পানিতে পরিযায়ী করে এবং এরা খুব ভাল সাঁতার কাটতে পারে এবং এদের পরিযায়ন পথের দৈর্ঘ্য ১০,০০০ মাইলেরও বেশী হয়ে থাকে।

৪. গ্রীষ্মে এরা শীতপ্রধান অঞ্চলে থাকে ও খাবার খায় এবং শীতে এরা গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় চলে যায় সেখানেই তারা তাদের প্রজননের কাজটি করে।

৫. এই বিশাল প্রাণীটি মাত্র ৫০ বছর বাঁচে যা মানুষের চেয়েও কম।

৬. এরা সাগরের ছোট মাছ, সাগরের চিংড়ি, স্যালমন সহ বিভিন্ন ছোট ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে। এরা একদিনে এক থেকে দের টনের ও বেশী খাবার খেতে পারে।

৭. এরা বিশাল দেহ নিয়েও কিলার তিমির শিকারে পরিণত হত। আর এদের বাচ্চারা ও প্রায় সময় হাঙ্গরের খাবার হয়ে যায়।

৮. এরা যেহেতু মানুষের মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী তাই এদেরও মানুষের মত বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে অক্সিজেন নেয় তবে এরা একঘণ্টা পর্যন্ত পানির নীচে দম আটকিয়ে থাকতে পারে।

৯. পুরুষ তিমিরা অনেক জটিল সুরের মাধ্যমে গান করতে পারে যা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়।

১০. এদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দেখা যায়।

ইউরোপ ও আমেরিকার তিমি শিকারিদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ পৃথিবী থেকে এই তিমিদের এখন বিলুপ্তির মুখে ফেলে দিয়েছ। গত বিংশ শতাব্দীতেই দুই লক্ষের ও বেশী তিমি হত্যা করা হয়েছে আর মোট জনসংখ্যার ৯০% এর ও বেশী হাম্প-বেক তিমি এরিমধ্যে হারিয়ে গেছে।

মাইন রানা

তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics