
প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকেই জন্ম হলো আমাদের। আমরা কারা?
ফারজানা হালিম নির্জন
Plastiglomerate, সম্পূর্ণ নতুন একটি নামের উদ্ভব হলো পৃথিবীতে। ইয়া বড় বড় কান-ওয়ালা কোনো জন্তু নয়, ছোট্ট পাখি নয়, কোনো গাছও নয়। কোনো খাবার জিনিস কিংবা বিখ্যাত কোনো লেখকের নতুন বইের নামও কিন্তু নয়! আর কিছুই নয়,সবাইকে চমকে দিয়ে তৈরী হয়ে গেছে এক নতুন ধরণের রক বা শিলা! কিন্তু তার জন্মটিই যেন মানব-জাতির জন্য বিরাত লজ্জাস্কর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণটা কী?
Plastiglomerate। নামটার সাথেই কেমন প্লাস্টিক প্লাস্টিক একটা গন্ধ আছে। সুতরাং,বোঝাই যাচ্ছে যে এর জন্মের সাথেও প্লাস্টিকের বিরাট কোনো অবদান জড়িয়ে আছে।সমুদ্রের তীরে জন্ম নেয়া এই ধরণের শিলা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন সমুদ্রবিজ্ঞানী ক্যাপটেইন চার্লস মোর। তিনি ভেবেছিলেন, গলিত লাভার সংস্পর্শে প্লাস্টিক গলে গিয়ে পর্যায়ক্রমে এই শিলার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু না, কিছুটা সংশোধন আনেন পরবর্তীতে একদল গবেষক। আর তখনই ধরা পড়লো,মানব-জাতির লজ্জার কারণ।
কানাডার University of Western Ontario- এর গবেষকগণ এই নতুন ধরণের শিলাকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাদের গবেষণার ফল যা দেখালো- সমুদ্রের তীরের প্লাস্টিক, পলিমাটি,লাভার অংশবিশেষ আর জৈবজ ধ্বংসাবশেষ একত্রে মিলে এই শিলার আগমন ঘটেছে। গবেষণা দল যা বলছেন, এই ধরণের শিলার অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র হাওয়াই দ্বীপের ক্যামিলো বীচেই পাওয়া গেছে,যাকে কিনা পৃথিবীর একটি অন্যতম নোংরা স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়!
অতএব,ঘটনা পানির মত পরিস্কার,। আমরা যে পরিমাণে পরিবেশ নোংরা করছি,তার ফলস্বরূপ উপহারও চলে এসেছে পৃথিবীতে। প্লাস্টিক থেকে শুরু করে কত বর্জ্যই না যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলি। সবাই দলবদ্ধ হয়ে যেন এবার আমাদের চোখে আঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন শিলা আকারে চলে এলো পৃথিবীর আঙ্গিনায়। এখন পর্যন্ত গবেষণার ফল বলছে, এই শিলার কোনো ভাঙ্গন নেই! আর এরা ভূ-তাত্ত্বিক চিহ্ণ হিসেবে রয়ে যাবে পৃথিবীতে চিরকাল…কিসের চিহ্ন? “দেখে রাখো- মানব প্রজাতি তাদের এই চমৎকার গ্রহটিকে কতভাবে নোংরা করেছো! আমরা, Plastiglomerate শিলারা তার চাক্ষুষ প্রমাণ !”
আর তাদের আগমনের এই খবরটিও কিনা প্রচারিত হলো, ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন! তারা কি তবে সত্যিই লজ্জা দেবার জন্য আসেনি?