প্লাস্টিক খেকো স্প্রে !!!
সিফাত তাহজিবা
স্প্রে ! হ্যা, স্প্রে- এরোসল স্প্রে, বডি স্প্রে আর ও অনেক রকমই হতে পারে। ভাবছেন, পরিবেশ এর মধ্যে আবার স্প্রের বিজ্ঞাপন আসে কেন?কারণ এই স্প্রে নিয়ে চমকপ্রদ ধারণার জন্ম দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিংহ্যাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র। চারবন্ধু; যাদের কেওই পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র নন। কেউ মনোবিজ্ঞান, কেউ প্রাণীবিজ্ঞান,কেউ বাণিজ্য,কেউ বা আবার বিপণন নিয়ে পড়ছেন।চার তরুণের এই দল আবিষ্কার করে ফেলেছেন ‘প্লাস্টিক দ্রবীভূতকরণ স্প্রে’ সোজা বাংলায় বলা যায় ‘প্লাস্টিক খেকো স্প্রে’ ।
আসুন জানি সেই আবিষ্কার এর কাহিনী – সুইডেন এ অবকাশ যাপন করতে গিয়ে এই বন্ধুদের দলটি দেখলেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অধিবাসীরা কিভাবে পরিবেশকে সুন্দর আর পরিষ্কার রাখছে, তাঁরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন সুইডেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।মনে জাগলো কিঞ্চিৎ হতাশা,কেন সম্ভব নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রক্ষা করা? তাঁরা দেশে ফিরে এলেন।সাথে করে নিয়ে এলেন ভাবনার উৎস আর স্বপ্নের শুরুটা। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশকে পরিষ্কার করার আইডিয়া আরও পাকাপোক্ত হলো যখন তারা লুইসিয়ানা উপকূলে বিপি ওয়েলের নিঃসরণ এবং সমুদ্রে তেল নিঃসরণের ফলে সৃষ্ট দূষণ ঠেকাতে কিভাবে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে তেল অপসারণ করা হচ্ছে এর উপর একটি প্রবন্ধ পড়েন এবং সরজমিনে তা ঘুরে দেখেন। সুইডেন থেকে আমেরিকা ফিরেই এই দলটি নিউইয়র্কের আউফবাউ ল্যাবের কিছু রসায়নবিদ এর কাছে গিয়ে তাদের এ প্রবন্ধের আইডিয়াটি খুলে বলে,রসায়নবিদের কাছে আইডিয়াটি পছন্দ হলো তবে এটাও জানালো যে ব্যাকটারিয়ার আইডিয়া টেকসই না ।ফলে তাঁরা বুঝতে পারলেন তাদের আইডিয়াটি অসম্পূর্ণ। বন্ধুরা মিলে কাজে নেমে পরলেন ,বিভিন্ন গবেষনা চলতে থাকলো টানা ২ বছর ধরে !! এরপর, হাজির হলো নতুন একটি আইডিয়া, যার নাম দেয়া হলো “প্লাসটেক” যাতে ব্যবহার করা হবে বেনজিন যৌগ। স্প্রে হিসেবে, যা কিনা মাটিতে প্রায় ৭ প্রকারের প্লাস্টিক বিশ্লেষণ করতে পারে,সেটি মাটিতে প্লাস্টিক কে পুরোপুরি মিশিয়ে দিতে সময় নেবে সময় নিবে ১২-৩৬ মাস।এর কয়েকদিন পর এই দলে পঞ্চম সদস্য হয়ে যোগ দিলেন সেই আউফবাউ ল্যাবের একজন রসায়নবিদ, ড. স্টিভেন বয়েড এবং দলটি পরিচিতি পেলো “ইনভাইরনমেন্ট” (invironment) নামে। এই প্লাসটেক (PlasTek) পরিবেশের জন্য একদমই বিষাক্ত নয়, আবার এটি দিয়ে প্লাস্টিক বিশ্লেষণ করে তা ব্যকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহত হয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় যা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করছে ল্যান্ডফিল ইন্ডাস্ট্রিগুলো। বিশ্লেষণকৃত প্লাস্টিক থেকে প্রাপ্ত মিথেন গ্যাস জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে ইন্ডাস্ট্রিগুলো ।২০১৪ সাল নাগাদ ‘PlasTek’ দ্রব্যটি বাজারে ছাড়া হবে। এভাবেই “ইনভাইরনমেন্ট” এগিয়ে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়ার ব্রত হাতে নিয়ে।