বনে বনে ঘুরে বেড়ায় ছোট সহেলী
আলম শাইন
ভারি সুন্দর নাম। সহেলী। কথাটার অর্থ সখী, বা বান্ধবী। যেমন সুন্দর নাম, তেমনি দেখতে। মিষ্টি ও শান্ত স্বভাবের বলেই এমন নাম কিনা কে জানে! আমাদের দেশেরই পাখি। আমাদের দেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। পারতপক্ষে লোকালয়ে ঘেঁষে না।
জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট ছোট ঝাঁক বেঁধে শিকারে বের হয়। অনেক সময় উড়তে উড়তেও এরা চমত্কার শিকার ধরে। শিকারের সময় ‘সুই-ই-সুই—ই-ই’ সুরে ডাকে। অবশ্য প্রজনন সময়ে স্বরে পরিবর্তন আসে। তখন ‘হু-হু-ইউটি টিটি টিটি’ সুরে ডাকাডাকি করে। এরা সামাজিক পাখি ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। সংখ্যায় প্রচুর হওয়ায় এবং গা ঘেঁষে উড়ে বেড়ানোর কারণে দূর থেকে মশার ঝাঁকের মতো মনে হয়। মজার ব্যাপার হল, গা ঘেঁষে উড়লেও এরা একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায় না।
পাখির বাংলা নাম : ‘ছোট সহেলি’, ইংরেজি নাম:’স্মল মিনিভেট’, বৈজ্ঞানিক নাম Pericrocotus cinnamomeus গোত্রের নাম:’ওরিয়োলিনি’। এরা ‘সোনা পাখি’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ছয় প্রজাতির সহেলির সাক্ষাত্ মেলে।
এরা লম্বায় ১৪ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৮ গ্রাম। স্ত্রীও পুরুষ পাখি দেখতে ভিন্ন রকম। পুরুষ পাখির মাথা, চিবুক, ও গলা কালচে-ধূসর। ওপরের দিকটাও ধূসর। ডানা কালচে-পাটকিলে। ডানার মাঝ বরাবর সিঁদুর লাল। লম্বা লেজ কালচে-পাটকিলে, মধ্যখানে একজোড়া পালক আগুনরঙা। কটি দেশ সিঁদুরে বর্ণ ও বুক সিঁদুরে লাল। নিচের দিকটা হলদেটে সাদা। লেজের তলা হালকা লাল। অপরদিকে স্ত্রী পাখির রঙ পুরুষের তুলনায় অনেকটাই ফিকে। ডানার মাঝখানটায় কমলা-হলুদ। বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত হালকা হলুদ। কটি দেশ আলতা-হলদে। উভয়ের ঠোঁট-পা কালচে।
মূলত পোকামাকড় ও পতঙ্গভূজী পাখি ছোট সহেলি। প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর হলেও স্থানভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। গাছের ১২-১৫ মিটার উঁচুতে দুই ডালের ফাঁকে পেয়ালা আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে সরু লতা, কচুরিপানা, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটে ছানা বের হতে সময় নেয় ১৪-১৯ দিন। শাবক উড়তে শিখে ১৫-২০ দিনে।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (১৯/০৮/২০১৩)