বন্ধু ব্যাকটেরিয়া আবিস্কার; আর্সেনিক দূরীকরণে আশার আলো

অতি সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মাটি এবং পানি থেকে আর্সেনিক দুরীকরণে কার্যকর একাধিক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ গবেষণার ফলে  মাটি এবং পানিতে আর্সেনিক দূষণ সমস্যার একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সমাধান আনয়ন সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় দেখা গেছে,  Geobacillus stearothermophilus  গণের এই ব্যাকটেরিয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ মিলিমাইক্রন পরিমাণ বিষাক্ত অজৈব আরসেনাইট( আর্সেনিক III)  কে আরসিনেট (আর্সেনিক V) কে পরিনত করতে সক্ষম। প্রকৃতিতে  এ দুই অবস্থায়ই আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে , তবে মাটি এবং পানিতে  আর্সেনিক (III) এর ঘনত্ব এবং দ্রবণীয়তা আর্সেনিক (V) এর চেয়ে অনেক বেশী এবং প্রাণীদেহে আর্সেনিক (V) এর উপস্থিতি কম মাত্রায় দেখা গেছে।

বিজ্ঞানীরা পশ্চিম বঙ্গের একটি আর্সেনিক দুষিত মাটি থেকে ব্যাকটেরিয়ার ১২ টি স্ট্রেইন বা নমুনা সংগ্রহ করেন এবং আর্সেনিক অক্সিডেশনে এদের ব্যবহার করেন। গবেষণায় ব্যাকটেরিয়ার ৪ টি  স্ট্রেইন কার্যকর বলে তাঁরা ধারণা করছেন, এর মধ্যে AMO-10 স্ট্রেইন সবথেকে বেশী কার্যকর এবং AGH-02 মাটির জৈব উপসমে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়।ACCESS TO IMPROVED SANITATION AND WATER

গবেষণা প্রধান , পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানী অপরাজিতা মজুমদার বলেন, আমাদের আবিষ্কৃত স্ট্রেইনগুলো জৈবিক- কৌশল প্রয়োগে আবিষ্কৃত স্ট্রেইনগুলোর থেকেও বেশী কার্যকর। যেহেতু , G. stearothermophilus স্ট্রেইনে এখনও পর্যন্ত কোন রোগ সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য দেখা যায়নি তাই অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবো।

বিশ্ব জুড়ে বায়ো- রিমিডেশন বা জৈব- প্রতিকারকে এখনও পর্যন্ত ধাতু সংক্রমণমুক্ত প্রযুক্তি বা মেটাল ডিকন্টামিনেশন প্রযুক্তির চেয়ে সস্তা এবং কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।আর্সেনিক পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। আর্সেনিক, শারীরে এনজাইমের কার্যকলাপে বিঘ্নিত ঘটায়, চামড়া, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রভাবিত করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ডঃ মজুমদারের দলটি এ গবেষণায় একটি জৈব উপায় অনুসন্ধান করা হচ্ছে যাতে করে  সাশ্রয়ী মূল্যে আর্সেনিককে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশনে প্রতিরোধ করার একটি কার্যকরী উপায় বের করা যায়। ইতোমধ্যে তাঁরা দুটি ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইন সনাক্ত করেছেন যার একটি  প্রকৃতিতে বিদ্যমান আর্সেনিককে উদ্বায়ী মেথিলেটেড আর্সেনিকে পরিনত করে, যা কিনা মাটি এবং পানি থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আলাদা হয়ে যায়, এবং অপর ব্যাকটেরিয়াটির রয়েছে অক্সিডেশন ক্ষমতা। আশার কথা হলো, অক্সিডেশন ক্ষমতা সম্পন্ন এই ব্যাকটেরিয়া ধানের সাথে আর্সেনিক মিশে যাওয়া রোধ করতে সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে ধানের মাধ্যমে আর্সেনিক বিষ আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের আর্থ, অ্যাটমসফেয়ার, অ্যান্ড এনভাইরনমেন্টাল  সাইন্স স্কুলের প্রফেসর ডেভিড পলয়া মনে করেন, বহু বছব ধরে আর্সেনিক নির্বিষ করণে আরসেনাইট- অক্সিডাইজিং ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলেও এবারের গবেষণা এক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। তবে তাঁর মতে, G. stearothermophilus ব্যবহার  করে আর্সেনিক  নির্বিষ করণে আরও পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে। 

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

২৬/০৮/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics