বাংলাদেশের টিয়া পাখিরা
মাইন রানা
খুবই পরিচিত একটি পাখি টিয়া। সবুজ রঙ, লম্বা লেজ ও বড় চ্যাপ্টা ঠোঁট দেখলেই সবাই টিয়া পাখি চিনে ফেলে। কিন্তু টিয়ার মধ্যে অনেক প্রজাতি আছে, যা অনেকেই খেয়াল করেন না। বাংলাদেশে মোট ৬ প্রকার টিয়া পাওয়া যায়।
বাসন্তী লটকন টিয়াঃ এর ইংরেজি নাম Vernal Hanging Parrot এবং দ্বিপদী বা বৈজ্ঞানিক নাম (Loriculus vernalis).
লাল ঠোঁট ও সবুজ দেহের সুন্দর গোলগাল এক টিয়া। এর লেজ অন্য টিয়াদের মতো লম্বা নয় বরং খাট। এর কোমরের কিছু পালক লাল হয়ে থাকে। সচরাচর পারিবারিক দল বা ঝাঁকে এদের পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কাপ্তাইয়ের ন্যাশনাল পার্কে বেশী দেখা যায়। এরা ডুমুর ফল, বট ফল, বাশ বীজ, ফুলের মিষ্টি রস খেয়ে থাকে। এরা গাছে উল্টো করে ঝুলে থাকতে, খাবার খেতে ও বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে। খাঁচায় পালনের জন্য এই টিয়া অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এই বাসন্তী লটকন টিয়া প্রচুর পরিমানে অবৈধভাবে ধরা ও বিক্রি হয়। এই অবৈধ শিকার একে হুমকিতে ফেলেছে।
মদনা টিয়াঃ এর ইংরেজি নাম Red-breasted Parakeet এবং দ্বিপদী বা বৈজ্ঞানিক নাম (Psittacula alexandri).
এটি অত্যন্ত সুন্দর টিয়া। এর ঠোঁট লাল, মাথা বাদামী, পিঠ সবুজ ও বুক লাল। গলায় সুন্দর একটি কালো মালা আছে। মেয়ে পাখির ঠোঁট কালো। এর লেজ লম্বা ও সবুজ। এদের বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। সিলেটের চা বাগান, চট্টগ্রাম, ভাওয়াল মধুপুর বনে এদের বেশী পাওয়া যায়। দলবেঁধে তীক্ষ আওয়াজ করে আকাশে উড়ে যেতে এদের প্রায়ই দেখা যায়।
পৃথিবীতে এর ৭ টি উপপ্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে Psittacula alexandri fasciatus এই উপপ্রজাতিটি পাওয়া যায়।
লালামাথা টিয়াঃ এর ইংরেজি নাম Plum-headed Parakeet এবং দ্বিপদী বা ল্যাটিন নাম (Psittacula cyanocephala).
এর ঠোঁট বড় ও বড়শির মতো বাকানো হলুদ রঙের। কিছু অংশ ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। এর মাথা খুবই সুন্দর নীলচে লাল রঙের যা একে আলাদা করেছে অন্য সব টিয়া থেকে। ডানার উপরের দিকে ছোট একটি গাঢ় লাল স্পট আছে। এর লেজ নীলাভ সবুজ, লম্বা ও সরু।
বাঁশঝাড় ও জঙ্গলের গাছে এরা দলবেঁধে রাত কাটায়। উড়ার সময় এরা অবিরাম টুই-টুই-টুই-টুই শব্দ করে তীক্ষস্বরে ডাকতে থাকে।
চন্দনা টিয়াঃ ইংরেজিতে এর নাম Alexandrine Parakeet or Alexandrian Parrot এবং ল্যাটিন বা দ্বিপদী নাম (Psittacula eupatria).
চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় টিয়া। এটি সারা পৃথিবীর মধ্যেও অনেক বেশী জনপ্রিয়। এর ঠোঁট গাঢ় টুকটুকে লাল। মাথার পিছনে ঘাড়ে ও ডানার উপরের দিকে মোটা লাল দাগ পাওয়া যায়।
সারা পৃথিবীর ৫ টি উপপ্রজাতির মধ্যে Psittacula eupatria nipalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এটি বর্তমানে বাংলাদেশে খুবই কম দেখা যায়।
সবুজ টিয়াঃ ইংরেজিতে একে বলে Rose-ringed Parakeet যার বৈজ্ঞানিক নাম (Psittacula krameri).
এর সবুজ রঙ অনেক বেশী সুন্দর। যেন কচি পাতার সবুজ রঙে এর পুরো দেহ আবৃত। এর ঠোঁট টুকটুকে লাল। গলায় গোলাপী একটা রিঙ রয়েছে। এর লেজ অনেক লম্বা ও সুচালো। ৪ টি উপপ্রজাতির মধ্যে Psittacula krameri borealis বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সব এলাকায় একে পাওয়া যায়।
ফুলমাথা টিয়াঃ এর ইংরেজি নাম Blossom-headed Parakeet দ্বিপদী নাম (Psittacula roseata).
গোলাপী মাথা ও সবুজ রঙের দেহ এই টিয়ার প্রধান আকর্ষণ। বুকের পালক হালকা সবুজ ও পীঠ গাঢ় সবুজ। এর ঠোঁট হলুদ এবং গলায় কালো বন্ধনী দেখা যায়। এর লেজ অনেক বড় ও সূচালো হয়ে থাকে। সিলেটের পাহাড়ি ও চা বাগান এলাকায় একে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। ২ টি উপপ্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে Psittacula roseata roseate পাওয়া যায়।