বাংলার ব্রহ্মপুত্র

এশিয়া মহাদেশে ব্রহ্মপুত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহে যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সাং পো নামে তিব্বতে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তখন এর নাম হয়ে যায় সিয়ং।63819611 তারপর আসামের ওপর দিয়ে দিহং নামে বয়ে যাওয়ার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরও দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। তারপর এটি ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের বাহাদুরাবাদ দিয়ে শুরু হয়ে তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের মধ্যে চলে গেছে। হিমালয়ের মধ্য দিয়ে আসাম উপত্যকা হয়ে আবার বাংলাদেশে। এক হাজার ৮০০ মাইল দীর্ঘ। বেশির ভাগ জলসেচনের জন্য ব্যবহার করা হয়। যখন নদীটির অধিকাংশ ব্যবহার উপযোগী হয় ঠিক তখনই বন্যা বিপর্যয়ের জন্য দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে যায়। এ নদী জোয়ার-ভাটার আশ্রয় কেন্দ্র নামেও পরিচিত। মানে সমুদ্র থেকে আসা জোয়ার-ভাটা নদীটি জলস্রোতের গতিপথের বিরুদ্ধ নিয়ে যায়। গবেষকরা একে সত্য সামুদ্রিক তরঙ্গ বলেছেন। এককালের প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদ বর্তমানে (২০১১) শীর্ণকায়। তিব্বতের কৈলাস পর্বতের হিমশীতল জলপ্রপাত, মানস সরোবরের নীলপদ্ম বিধৌত জলরাশি ও চেমাইয়াং ডং হিমবাহের স্রোতে সৃষ্ট প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্রের আদি রূপের বিবরণ এখন শুধু ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যাবে।Jamuna_River_map_Beautiful_Bangladesh01 উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদের বাংলাদেশ অংশের পুরনো ব্রহ্মপুত্র এখন শুধুই যৌবনহারা মরা খাল। আবার কোথাও কোথাও এ নদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। যেন মানচিত্র থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান হাল এটি। দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘ এই নদকে ঘিরে দু’পারের হাজারও মানুষ শত বছর ধরে গড়ে তোলে তাদের জীবিকা। কিন্তু বর্তমানে মরা খালে পরিণত হওয়ায় প্রায় দুই হাজার বর্গকিলোমিটার অববাহিকায় বসবাসকারী বৃহত্তর ময়মনসিংহের এক কোটি মানুষ আজ পানির সুবিধা-বঞ্চিত। অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ব্রহ্মপুত্রের অস্তিত্ব আজ নাব্য সংকটে বিপন্ন।

ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনা ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় পারের মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন তিন হাজার কিউসেক, সেখানে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পানিপ্রবাহ ছিল গড়ে মাত্র ৩০ কিউসেক। পাশাপাশি স্রোত না থাকায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে এ নদ। এর ফলে কৃষি কাজে নেমে এসেছে বিপর্যয়। জানা যায়, গত ৫০ বছরেও কোনো ড্রেজিং না হওয়ায় নদের তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics