বাউ-বায়োফানজিসাইড উদ্ভিদের রোগ দমনে নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন ১৯৯৫ সাল থেকে  জৈবিক পদ্ধতিতে ফসলের রোগ দমনের ওপর গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন বাউ-বায়োফানজিসাইড নামের এক প্রকার জৈবছত্রাকনাশক। অল্প খরচে পরিবেশবান্ধব এই জৈবছত্রাকনাশকের ব্যবহার বাংলাদেশে কৃষি েেত্র ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর তিকর প্রভাব থেকে রা করবে।TRICHODERMA_Organic_Biofungicide_Biofertilizer.jpg_250x250

ড. ইসমাইল হোসেন জানান, বাউ-বায়োফানজিসাইড প্রকৃতি থেকে আহরিত ছত্রাক ট্রাইকোডার্মা যা কৃষিজ উচ্ছিষ্টের ওপর জন্মানো একটি উৎপাদিত ফানজিসাইড। এটি সহজেই কৃষিজ উচ্ছিষ্টের ওপর জন্মানো যায় বলে এর উৎপাদনমূল্য একেবারে স্বল্প যা কৃষিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সম। বীজ শোধনের জন্য ওজন অনুপাতে ২.৫-৩.০ শতাংশ এবং বীজের মাটি সিক্তকরণ ও পাতায় প্রয়োগে ২ শতাংশ পানির সাথে স্প্রে করতে হবে। এ বাউ-বায়োফানজিসাইড কৃষক বাড়িতে ছয় মাস পর্যন্ত সহজেই মজুদ রাখতে পারবেন। বিভিন্ন সবজিবীজ যেমন মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, করলা, লাউ, ধুন্দুল, টমেটো, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কলমিশাক, লালশাক, মুলা, ঢেঁড়শ, বরবটি, পুঁইশাক, পালংশাক এবং তেল, ডালজাতীয় শস্যবীজ শোধন করা যায়। এতে গোড়া পচা রোগ কমে, ডাল জাতীয় শস্যের নুডলেশন বেড়ে যায়। এ ছাড়াও আলুকে বীজ হিসেবে শোধন করা যায়। এর ফলে বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাক থেকে বীজকে এবং চারাকে রা করে। ফলের েেত্রÑ পেঁপে, তরমুজ এবং ফুটিবীজ শোধন করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, দানাজাতীয় শস্যে যেমন ধান, গম, ভুট্টার বীজের অঙ্কুরোদগম তাৎপর্যপূর্ণ হারে বৃদ্ধি পায় সর্বোপরি ফলন বৃদ্ধি পায়।

ফলজাতীয় গাছে বাউ-বায়োফানজিসাইড স্প্রে করলে কাঁঠালের চারার বৃদ্ধি পর্যায়ে চারাগাছের ‘পাতার দাগ’ রোগের আক্রমণের হার কমিয়ে দেয়, চারার উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, ব্লাকবেরির ‘পাতার দাগ ও লাল মরিচা’ রোগ আমের েেত্র চারার ‘অ্যানথ্রাকনোজ, লাল মরিচা এবং পাউডারি মিলডিউ’ রোগ, বরইয়ের ‘পাউডারি মিলডিউ এবং অলটারনারিয়া লিফ স্পট’ রোগ, লেবুর চারাগাছে স্ক্যাব রোগের আক্রমণ এবং রোগের প্রকোপ কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন শস্যের যেমন টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স, লালশাক, ডালজাতীয় শস্য, শিম, মরিচ, গাজর, বাদাম, সয়াবিন এবং কুমড়াজাতীয় শস্যের শিকড়ের গিট রোগ দমন হয়, শিকড়ের দৈর্ঘ্য এবং কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়, চারাগাছের তেজস্বতা বৃদ্ধি পায়, নেমাটোডের ও এর এগ মাস এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শিকড়ে গলের সংখ্যা কমে যায়।

বাউ-বায়োফানজিসাইডের বিভিন্ন প্রয়োগ ও তার সুফল প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন আরো বলেন, ‘ভাল বীজে ভালো ফসল।’ বীজ যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে সেই বীজ থেকে ভালো ফসল আশা করা যায় না। বাউ-বায়োফানজিসাইড ব্যবহারে সব ধরনের বীজ ও উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ৬০-৮০ ভাগ কমানো সম্ভব। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত এটি একটি অনন্য ও দুর্লভ প্রযুক্তি যা শস্য উৎপাদন ও পরিবেশকে রা করবে। বিদেশ থেকে রাসায়নিক ছত্রাকনাশক আমদানিব্যয় এবং কৃষকের ব্যয় সঙ্কোচন করবে। সর্বোপরি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি।

সূত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত (০৪/০৫/২০১৩)

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics