বিধ্বংসী রাজনৈতিক কর্মকান্ড; বৃক্ষ নিধনে পরিবেশগত অর্থনৈতিক ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিবেশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে নির্বিচারে রাস্তার পাশের বৃক্ষ কর্তন করা হচ্ছে। যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। পরিবেশবান্ধব পরিবহন রেলের উপর উপর্যুপরি হামলায় জনপ্রিয় এ মাধ্যমটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাসসহ গণপরিবহন পোড়ানোর মাধ্যমে যাত্রীদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নানাভাবে পরিবেশের উপর আঘাত হানা হচ্ছে। পবার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পরিবেশের উপর বিভিন্ন বিরূপ প্রভাবের চিত্র আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩, সকাল ১১ টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরে উক্ত পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে সকল রাজনৈতিক দুলের প্রতি আহবান জানায়।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়- অতি সস্প্রতি হরতাল ও অবরোধের সময় সারা দেশে সড়ক- মহাসড়ক বন্ধ করার জন্য হাজার হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। যে গাছগুলো হয়তো আগামী ২০ বছরেও আর পূন:স্থাপন করা সম্ভব হবে না । এর ফলে পরিবেশের যে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তা আর আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। বৃক্ষ নিধনে পরিবেশগত অর্থনৈতিক ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। দেশে ভূমির তুলনায় বন বা বৃক্ষের সংখ্যা যেখানে অনেক কম সেখানে এভাবে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন শুধু দায়িত্বহীনতাই নয় তা পরিবেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপরাধ হিসাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান।পবা

এ ছাড়া দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়ে একটি সুলভ ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন। দেশের রেল ব্যবস্থাকে উন্নত ও বিস্তৃত করতে পারিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) দীর্ঘদিন যাবত নিরলস আন্দোলন করে আসছে। এমনকি আমাদের দাবী ও আন্দোলনের ফলেই রেলওয়ের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে রেলওয়ের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে চলতি মাসের রেলের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এই সম্পদ রাষ্ট্রের তথা জনগণের। আমরা অবিলম্বে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠন সমূহের কাছে জোরালো দাবী জানাচ্ছি। এবং ভবিষতেও যেন কোন দল আন্দোলনের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে সে বিষয়েও সকল রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করার দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের আলোকে বৃক্ষের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, রেলের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী।

গত ৫ মে ২০১৩, হেফাজতে ইসলাম ঢাকার মতিঝিলে মহা সমাবেশের সময় মতিঝিল পল্টন এলাকায় সকল গাছ কেটে ফেলে। তার পর পরই আমরা দেখি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ও নোয়াখালী চাঁদপুরের রাস্তায় দুইদিনে প্রায় ২০ হাজার গাছ কাটা হয়।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে দেশের বৃক্ষ এবং রেলওয়ের যে পরিমান ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়-
গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছ ফল, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ ওষুধ, কাঠ ও জ্বালানী দেয়। আমাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী যে কার্বণ ডাইঅক্সাইড গ্যাস গাছ তা শোষণ করে। পরিবেশবিদদের মতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের মোট ভ’মির ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারী হিসাব মতে ১৭ ভাগ বনাঞ্চল রয়েছে। সরকারের বৃক্ষ রোপণ অভিযানের মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামেগঞ্জে, রাস্তাঘাটে গাছ লাগানোর প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে রাস্তার দুপাশে গাছ লাগানোর ফলে পরিবেশ উন্নত হচ্ছে, রাস্তাগুলো ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে, উপকারভোগী গরীব জনসাধারণের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় সড়ক অবরোধের নামে মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, জেলা, উপজেলা ও গ্রামীন সড়কে যেভাবে গাছ কাটা হয়েছে ও হচ্ছে তাকে পরিবেশ বিধ্বংসী নিষ্ঠুর বর্বতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এ গাছগুলোর মালিক বন অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, এলজিইডি, জেলা পরিষদ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক বনায়নের আওতাধীন গাছ। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এগুলো পরিচর্যা করে এবং এর ফলমূল তারাই ভাগ করে নেয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর গাছগুলো বিক্রি করা হলে তারা এ গাছগুলোর অংশীদারিত্ব পায়। রাজনৈতিক সহিংসতায় গাছগুলো কাটার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের দরিদ্র মানুষ এবং দীর্ঘমেয়াদে বিপন্ন হয়েছে পরিবেশ। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।

রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০১৩ সালে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০-৩০ বছর লাগবে এবং দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। গাছ নিধনের মাধ্যমে দেশকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত করার পাঁয়তারা চলছে। ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। মে মাসের ৫ তারিখে হেফাজতে ইসলামী ঢাকার মতিঝিলে মহাসমাবেশ করে এবং পল্টন, নয়া পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, শাপলা চত্ত্বর এলাকায় ব্যাপকহারে বৃক্ষ নিধন করে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখের অবরোধের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে দেশের বৃক্ষ এবং রেলওয়ের যে পরিমান ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যান নিচে সংযুক্ত করা হল।

ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এখানে– Keynote on rail and tree 26 dec 2013

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics