বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী

দেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভোলার লালমোহনে নিহত হয়েছেন এক বৃদ্ধা। বজ্রপাতে চার জেলায় নিহত হয়েছেন চারজন। পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ফরিদপুর, নড়াইল, মাগুরাসহ অনেক এলাকায় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম, লিচু ও ফসলের।

ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার লালমোহনে মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি।

নিহতের নাম তাহেরা বিবি (৬০) তিনি ধলিগৌর নগর ইউনিয়নের ভেদুরিয়া গ্রামের মৃত ইউনুস মিয়ার স্ত্রী।

ঝড়ের রাত থেকে লালমোহন উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। অন্য দিকে ঝড়ে ঘরভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ লাইনেরও ব্যাপক তি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়ে মহাসড়কসহ উপজেলার সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ঝড়ে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন আ: মালেক, মো: শামীম, মো: মাহবুব, মিজান ও শিশুকন্যা জান্নাতি। ঝড়ে বিধ্বস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। এ দিকে ঘূর্ণিঝড়ে চড়াইল আ: আলী মাদরাসা, ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন ফাজিল মাদরাসা, আল গাজ্জালী ফাজিল মাদরাসা, ইকড়ি বিপি এম দাখিল মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়।130322155051_bangla_brahmanbaria_tornado_304x171_focusbangla_nocredit

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, কাউখালীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১০ মিনিটের এক শক্তিশালী টর্নেডোতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পাঙ্গাসিয়া বাজার ও ফলইবুনিয়া গ্রাম। এ সময় টর্নেডোর আঘাতে পথচারীসহ ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত আলমগীর হোসেনকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতরা হলেন সৈয়দ আলী সিকদার, রুহুল আমিন, মজিদ সিকদার, দুলাল, সিরাজ, মালেক, নেহাব খন্দকার, আজিজ খন্দকার। তাদের স্থানীয় কিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। টর্নেডোর আঘাতে পাঙ্গাসিয়া বাজারের ২০০ বছরের পুরনো পাঁচ লক্ষাধিক টাকার একটি রেন্ট্রি গাছ উপড়ে পড়ে যায়।

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে একটি কলেজ ও তিনটি মাদরাসাসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ১৫ জন। উপড়ে পড়েছে শত শত বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ। ৩০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে ১০-১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের বরাত দিয়ে উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বরিশালের শতাধিক বাড়িঘর, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎসংযোগ। রাস্তায় উপড়ে পড়েছে শত শত গাছ। ঝড়ে নগরীর পলাশপুর ও রসুলপুর এলাকার শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া বরিশাল নগরীর রাজাবাহাদুর সড়ক, সিঅ্যান্ডবি রোড আমতলার মোড় ও কাশিপুরে গাছ উপড়ে তারের ওপর পড়ায় এবং বিলবোর্ড ভেঙে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। রাতভর বরিশাল নগরী ছিল অন্ধকারে। গতকাল দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়।

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। শুধু পটুয়াখালী-কলাপাড়া মহাসড়কের দুই পাশেই ভেঙে পড়েছে দুই শতাধিক গাছপালা। নদীবন্দরে চলছে ২ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত। ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি শিলা ও বজ্রবৃষ্টি হয় বিভিন্ন স্থানে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মঙ্গলবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ১৫টি বসতবাড়ি ও দোকান, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের আঘাতে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। এ সময় ঝড়ের সাথে তীব্র বর্ষণ ও ব্যাপক বজ্রপাত হয় বলে তিগ্রস্তরা জানান।

বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, মাত্র ৫ মিনিটের টর্নেডোর আঘাতে মঙ্গলবার বাগেরহাটের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও বোরো ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে অর্ধশত লোক। মঙ্গলবার রাতে বয়ে যাওয়া এই টর্নেডোর আঘাতে তিনটি গ্রামের শতাধিক বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় আহত হয় ভ্যানচালক জামাল শেখের শিশুকন্যা শিখা (৬) ও দিনমজুর সালাম মোল্লার ছেলে আজীজুল (১০)সহ ২৫ জন। উপড়ে পড়েছে অনেক গাছপালা। টর্নেডোর কারণে এ দিন রাত থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে বৈদ্যুতিক লাইন বিছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে বাগেরহাট শহরের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এর মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে সদর উপজেলার মদিনাতুল উলুম আদর্শ মাদরাসা ও মিত্রের ডাঙ্গা মসজিদ।

নড়াইল সংবাদদাতা জানানা, নড়াইলে মঙ্গলবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বোরো ধানসহ আম ও লিচুর ব্যাপক তি হয়েছে। নড়াইল সদরের পাইকমারি, কামালপ্রতাপ, দত্তপাড়া, নূরমোহাম্মদ নগর, আলীগঞ্জ, ভুমুরদিয়া, লোহাগড়া উপজেলার আমাদা, কুচিয়াবাড়ি, ঈশানগাতী, বসুপটি, এড়েন্দাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। লোহাগড়ার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের তরিকুল ইসলাম জানান, শিলাবৃষ্টির সাথে হালকা ঝড়ো হওয়ায় বেশির ভাগ বোরোধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মওসুমি ফসলের বেশ তি হয়েছে।

এ দিকে ঝড়ো বাতাসসহ শিলাবৃষ্টির পর থেকে গতকাল এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নে গতকাল আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে। ঝড়ের কবলে উপজেলার ফাজেল খাঁর ডাঙ্গী গ্রামের দিনমজুর ঈমান খাঁর একমাত্র ছনের ঘরের ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়লে গৃহবধূ রাফেজা আক্তার (২৮) গুরুতর আহত হন। তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক তি হয়েছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টির সাথে ব্যাপক শিলাপাত শুরু হয়। কোথাও কোথাও এক কেজি ওজনের শিলা পড়ে। শিলাবৃষ্টির কারণে উপজেলা সদর দীঘা বাবুখালী, পলাশবাড়িয়া ও নহাটা ইউনিয়নের ফসলের তি হয়েছে। মহম্মদপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: শরিফ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, শিলাবৃষ্টিতে পাঁচটি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ফসলের তি হয়েছে। তি নিরূপণের কাজ চলছে।

বজ্রপাতে ৪ জেলায় নিহত ৪

বড়াইগ্রাম (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামে গতকাল বজ্রপাতে সুজন আলী (২৪) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সুজন চণ্ডিপুরের হরফ আলীর ছেলে।  বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মমিন আলী জানান, গতকাল সকালে বৃষ্টির সময় সুজন বাড়ির বারান্দায় বসে ছিল। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে সুজনের সারা শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন।

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় মঙ্গলবার বজ্রপাতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পাঁচনল গ্রামের আজিবর রহমানের মেয়ে সোহানা খাতুন (১৫) জালালাবাদ গ্রামে খালার বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে সন্ধ্যায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে নীলগঞ্জ স্টেশনে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। নিহত ইছব আলী দিন মজুরের কাজ করতেন। এলাকাবাসী জানান, নীলগঞ্জ স্টেশনের কিছু দূরে হালকা বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইছব লুটিয়ে পড়েন।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর তিন উপজেলায় গতকাল কালবৈশাখী ঝড়ে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। এ সময় বজ্রপাতে হেলেনা আক্তার (৩৫) নিহত হন। উপড়ে পড়ে হাজার হাজার গাছ। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। সূবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মেহেদী হাছান বলেন, ঝড়ে উপজেলার মোহাম্মদপুর, চরকার্ক ও পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে বেশ কিছু বাড়িঘর ও একটি মাদরাসা পড়ে যায়। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো: সিরাজুল ইসলাম বলে, ঝড়ে তিগ্রস্তদের মাঝে তাৎণিক ৬ টন চাল, টিন ৬০ বান্ডিল ও নগদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।

ফেনী অফিস জানায়, ফেনীর উপকূলীয় অঞ্চল সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে গতকাল কালবৈশাখীর আঘাতে শতাধিক ঘরবাড়ি তিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় গাছ ও ঘরের চালের আঘাতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে।

প্রত্যদর্শীরা জানান, চরদরবেশ ইউনিয়নের দণি চর দরবেশ গ্রাম, আদর্শগ্রাম ও নূরানী বাজার, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের মধ্যম চরচান্দিয়া, দণি চরচান্দিয়া, দণি-পূর্ব চরচান্দিয়া গ্রামে হঠাৎ কালবৈশাখী আঘাত হানে। এতে শতাধিক বাড়িঘরের চাল উড়ে যায়। আদর্শগ্রাম দারুল উলুম আশ্রাফিয়া মাদরাসার দু’টি ঘর ও দণি-পূর্ব চরচান্দিয়া গ্রামের জিন্নাত আলী জামে মসজিদের একাংশ উড়ে যায়। গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ায় জনচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শীলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে। এ সময় আবদুল কাদের, আবদুল মন্নান, ইসমাইল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে তিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়নি সরকারিভাবে। ঘূর্ণিঝড়ের তিন দিন পার হলেও স্থানীয় এমপির কোনো উদ্যোগ পরিলতি হচ্ছে না। ফলে অনেক পরিবার রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

অভয়নগর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় গতকাল কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বাড়িঘর, গাছপালাসহ ফসলের ব্যাপক তি হয়েছে। অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে ১২টি পরিবার। উড়ে গেছে বিদ্যালয়ের টিনের চাল। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকা রয়েছে বিদ্যুৎবিহীন।

সূত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত (১৮/০৪/২০১৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics