বিলুপ্তপ্রায় গব্লিন শার্কের সাথে এরা কারা?? আইসোপোডস !!!
মহিউদ্দীন আহমদ মুন
গত মাসে জর্জিয়ায় জেলে কার্ল মোর’এর জালে ধরা পড়ে গভীর সমুদ্রের এক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি; গব্লিন শার্ক। এই খবরটিই বিজ্ঞানীদের জন্য যথেষ্ট রোমহর্ষক ছিলো। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই তাতে যোগ হলো নতুন আরেকটি খবর; যখন তারা ছবিতে দেখতে পেলেন, শার্কটি একাই সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে আসেনি, বরং সাথে করে নিয়ে এসেছে আরো অসংখ্য গবেষণার বিষয়বস্তু।
শার্ক বা হাঙ্গর বিশেষজ্ঞ জন কার্লসন বলেন, সর্বপ্রথম ২০০০ সালে মেক্সিকান উপসাগরে গব্লিন শার্ক প্রজাতির কোন এক সদস্যকে ধরা হয়। সেই হিসেবে গত মাসে মোরের জালে ধরা পড়া গব্লিন শার্ক হল সেই প্রজাতির ২য় সদস্য।
মোর জানান, লম্বায় শার্কটি ছিলো ১৮-২০ ফুট। তার ১৮ দিনের মাছ ধরা কর্মসূচির মাঝামাঝি সময়ে, এপ্রিলের ১৯ তারিখে তিনি এই গব্লিন শার্কটি ধরে্ন।
ডাঙ্গায় তোলার পর এই বিলুপ্তপ্রায় হাঙ্গরটি তখনো জীবিত ছিলো। তাই অস্তিত্বের নিদর্শনস্বরূপ কিছু ছবি তোলার পর মোর হাঙ্গরটিকে আবার তার আপন বাসভূবনে ছেড়ে দেন। হাঙ্গর-বৃত্তান্তের এখানেই সমাপ্তি। এখন বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়বস্তুর প্রধান মোড় ঘুরে গেলো অন্যদিকে। মনোযোগের কেন্দ্রে এবার- ছবিটিতে দেখতে পাওয়া অতল সমুদ্রের বিলুপ্তপ্রায় অন্যান্য প্রজাতির অসংখ্য প্রাণি।
ক্যালিফোর্নিয়ার সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী এন্ড্রিউ থ্যালার বলেন, ছবিতে কার্ল মোর’এর জালে আটকা পড়া গভীর জলের অসংখ্য আইসোপোডস (আর্থ্রোপোডা পর্বের একটি বর্গ)দেখা যাচ্ছে। এদের বর্ণনা দিতে গিয়ে এন্ড্রিউ থ্যাল আরো বলেন, সাধারণত গভীর জলের প্রাণীদের আকার ২০ সেন্টিমিটার হয়। আর যেহেতু এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তাই এদের স্থান নির্ণয় করাও বেশ কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, তিনিও কখনো একই সঙ্গে এত গুলো আইসোপোড কে এক স্থানে দেখেন নি।
তাহলে, এখন প্রশ্ন হলো, বিলুপ্তপ্রায় এই অতল জলের বাসিন্দাদের হুট করে একত্রিত হবার কারণটা কী? ছবি তোলার ব্যাপারটা কি তারা আগেই তবে অনুমান করেছিলো? না, একেবারেই নয়। ব্যাপারটি অন্য জায়গায়।
গভীর সমুদ্রে খাবার অপ্রতুল। যেহেতু গভীর সমুদ্রে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, তাই সেখানে উদ্ভিদ প্রায় জন্মায় না বললেই চলে। ফলে খাবারের সন্ধানেই তারা একত্রিত হয়। থ্যাল আরো একটু মজা করে বলেন, মোর যখন গব্লিন শার্কটিকে তার জালে আবদ্ধ করে, তখন নিশ্চয়ই অন্য প্রজাতির সেসব সামুদ্রিক প্রাণিদের রাতের ভোজ চলছিলো! ভোজ পর্বের মাঝেই হঠাৎ উঠে আসতে হলো জলের পৃথিবী থেকে স্থলের পৃথিবীতে। আর তুলকালাম আলোড়ন ফেলে দিতে হলো বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কে, অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই কিনা!