
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই সুন্দরবন দিবস !
১৪ই ফেব্রুয়ারি, বিশেষ এই দিবসটি হয়তো এক অর্থে গুরুত্ব বহন করে, তবে ঠিক তার সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ আর একটি বিষয়কেও আমরা তেমনি গুরুত্ব সহকারে ভালবেসে চলেছি। যদি ১৪ই ফেব্রুয়ারি কে শুধু বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবেই জেনে থাকেন, তবে আরেকটি বিষয় জেনে নিন, আজ কিন্তু সুন্দরবন দিবসও! ভালবাসা দিবসে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এতো চমৎকার একটি উপলক্ষ্য আর কোথায় পাবেন বলুন তো?
২০০১ সালে খুলনা শহরে ‘জাতীয় সম্মেলন’-এ ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ’সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষনা করা হয় । নিজের ভালবাসার কিছু অংশ সুন্দরবনের জন্য বরাদ্দ দিলে আপানার অর্ধাঙ্গী কি রাগ করবেন? নিশ্চয়ই না…
দেহের প্রতিটি অঙ্গ আমাদের ঐচ্ছিক বা অনৈচ্ছিকভাবে অনেক কাজ করে যায় প্রতি সেকেন্ডে। অপার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশেই তো কোন অঙ্গকে আমরা হারাতে চাই না কিংবা চাইনা তাদের কোনপ্রকার ক্ষতি করে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে। স্বাভাবিক কথা- আপন ভালো পাগলেও বুঝে। তবে কেন আপনি আপনার ফুসফুস নিজের হাতে নষ্ট করছেন? হ্যাঁ আমি সুন্দরবনের কথা বলছি, বাংলাদেশের ফুসফুসের কথা বলছি। যার গায়ে একটু আঁচড় মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। অল্প অল্প করে শেষ করে দিতে পারে চির সবুজ, অমর যৌবনা সুন্দরবনকে।
আজ সুন্দবনের মাটি ভালো নেই, গাছপালা ভালো নেই। বনের হরিণগুলোর মাঝে অবাধ ছোটাছুটি নেই, শান্তিতে নেই জলের কুমিরও। সবাই আতঙ্কে থাকে, তাদের চির চেনা শান্ত এই পৃথিবীতে এরা কারা, এত বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, ট্রলার। মাঝে মাঝে দুপেয় মানুষগুলোর দ্বারা শিকার হওয়ার চিন্তা তাদের আর ভালো থাকতে দিচ্ছে না। এই দিকে গাছপালা রয়েছে আর এক জ্বালায়। অল্প অল্প করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা, ক্রমে শূন্য হচ্ছে প্রতিবেশি গাছগুলো। তারপর আবার গায়ের উপর তেল ঢেলে দিচ্ছে বিবেকবান মনুষ্যজাতি। তেলের মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাসমূলের। হয়তো আর টিকে থাকতে পারবে না। জীবন প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে না তো? মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতেই মুহুর্তের পর মুহুর্ত কাটছে অস্থিরতায়…
অনেক হুমকির মাঝে আছে আমাদের প্রিয় সুন্দরবন। আর মুখে মুখে যত কথাই বলি না কেন,আমাদের জাত ভাইয়েরাই তো এদের এই আশংকাজন জীবনের জন্য দায়ী। একে বাঁচাতে হবে… একটু সচেতনতা, আপনার বুদ্ধিদীপ্ত অংশগ্রহণ, সর্বোপরি মনে দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আমি আমার পরের প্রজন্মের জন্য যেভাবেই হোক সুন্দরবনকে ধ্বংস হতে দিবো না।
না হলে আপনার সন্তানকে গল্প শোনাতে হবে এভাবে “একদা এক বন ছিল,সুন্দরবন নাম। সেখানে বাস করতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আর এই যে চিড়িয়াখানায় পাথরের বাঘ দেখছ এটা হলো সেই রয়েল বেঙ্গল…”
দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া তখন আর কোনোই উপায় থাকবেনা। এখনো কি একটি অজানা ভয়ে মন আচ্ছন্ন নয়?
এখন বলুন আপনি সুন্দরবনকে কতটুকু ভালোবাসেন? ভালবাসতে হবে, ভালবাসাতে হবে। জীবনে সামনের দিনগুলো সুখে শান্তিতে থাকতে আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আপনার ভালোবাসার মানুষটির কাছে অঙ্গিকার নামায় কতকিছুতেই না স্বাক্ষর করবেন, এর সাথে সাথে এটিও শপথ করুন—“ বেঁচে থাকতে বাংলার ফুসফুসকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে আমিই রক্ষা করব”
হাবিব লাবু
৪র্থ বর্ষ
মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়