বিষধর সাপের ছোবল থেকে রক্ষার নূতন পদ্ধতি!!

শাওন চৌধুরী

সাপ, এই সুন্দর প্রাণিটির নাম শুনলেই গা শিরশির করে ওঠে। যদিও এদের বেশিরভাগ প্রজাতিই আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। তারপরেও এদের মধ্যে এমন কিছু প্রজাতি আছে যাদের এক কামড়েই মৃত্যু সুনিশ্চিত। যার কারণেই সবার মধ্যে এদেরকে নিয়ে এতো ভয়! বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে অনেক প্রচেস্টা চালাচ্ছেন যে কি করে এই বিষের হাত থেকে সাধারণ মানুষদেরকে রক্ষা করা যায়!

সম্প্রতি California Academy of Sciences এর Dr. Matthew Lewin এবং Trinity College Dublin, Ireland এর Dr. Stephen P. Samuel এর অধীনে কিছু গবেষক সাপের বিষের হাত থেকে কি করে মানুষকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য ফলাফল পেয়েছেন। এই গবেষকের দল গোখরা সাপ ও ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এরা neostigmineনামক এক ধরণের এন্টিপ্যারালাইটিক ঔষধ ব্যবহার করেছেন।snake bite

এই পরীক্ষার সময়ে এরা ইঁদুরগুলোকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে একেকবার একেকরকম বিষের মাত্রা (সাধারণের থেকে কয়েক গুণ বেশি) দিয়েছেন এবং প্রতিকারের জন্য কিছু সময় পরপর নিওস্টিগমাইন এর উপপ্রয়োগ ঘটিয়েছেন। পনেরোটা ইঁদুরের মধ্যে ১০টি ইঁদুরের শরীরে সর্বনিম্ন মাত্রার বিষ প্রবেশ করানো হয়েছে এবং ১০ মিনিট পরে বিষনাশক হিসেবে নিওস্টিগমাইন ব্যবহার করেছেন। বিষনাশক ব্যবহারের পরে সব ইঁদুরই আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে কিন্তু এই একই পরিমাণের বিষ অন্যান্য ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়ে বিষনাশক ব্যবহার না করার কারণে ইঁদুরগুলো মারা গেছে।

আবার কিছু ইঁদুরকে বিষের স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি পরিমাণ বিষ শরীরে প্রবেশ করানো হলে তারা সাথে সাথেই মারা গেছে। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে বিষনাশক ব্যবহার করা হয়েছে তারা তুলনামূলক অনেক বেশি সময় বেঁচে ছিল। এসব ইঁদুরগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সদস্যকে একবার করে এবং কিছু কিছু সদস্যের শরীরে অনেকবার সূচ দিয়ে বিষ ঢুকানো হয়েছিল। আশাপ্রদ ফলপ্রাপ্তির কারণে এই দল বিশিষ্ট রসায়নবিদ ও সাপের বিষ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ইংল্যান্ডের Reading University এর Dr. Sakthivel Vaiyapuri এর সাথে কাজ করা শুরু করেছেন।

ড. লেভিনের মতে,

‘এই সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে বিষনাশকের প্রয়োজন হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য ভাল ফল আশা রাখি, সেসব ক্ষেত্রেই এরা বেশিরভাগ সময়েই ব্যর্থ। এটা সত্য যে সব মেডিকেল প্রতিষ্ঠান এবং প্রস্তুতকারক সাপের প্রতীক ব্যবহার করে, তারপরেও বিষধর সাপের কামড় থেকে মানুষকে রক্ষা করার মতোন কোন কিছু এখনো আমরা আবিস্কার করতে পারিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা এসব সাপের কামড়ে মারা যায় তাদের বেশিরভাগই সমাজের নীচু স্তরের মানুষ, ধারণা করা হয় শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগই এরা। টাকার অভাবের কারণে এরা অনেক প্রতিকারই গ্রহণ করতে পারেনা, যার কারণে মৃত্যুই এদের একমাত্র পথ হয়। তবে একটা কথা না বললেই নয় যে, একবিংশ শতাব্দীতে সাপের কামড়ে মানুষ মারা যাবে এটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমরা ভাল সাফল্যের আশাবাদী।’hd-snake-wallpapers-best-desktop-background-photographs-widescree

 প্রথমে এই গবেষক দল ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে এক আলোচনা সভায় সাপের বিষ থেকে সাধারণ মানুষদের রক্ষা পাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। এসময়ে তারা এক পরীক্ষা করেন, ঐ পরীক্ষায় একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষকে ভলান্টিয়ার হিসেবে নেয়া হয়। প্রথমে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীর অবশ করা হয় এবং সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, জ্ঞান ফেরার পরে তার শরীরে গোখরা বা তার সমমানের বিষধর সাপের বিষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একধরণের তরল তার শরীরে প্রবেশ করানো হয়। সাধারণভাবে সাপের কামড়ে ঐসব সাপের কামড়ে শরীর যেমন ধীরে ধীরে প্যারালাইজড হয়ে যায়, এখানেও ঠিক একই পদ্ধতিতে চোখের পাতা থেকে শুরু করে সমগ্র শরীর এমনকি শ্বাসতন্ত্রও অবশ হতে থাকে। পরবর্তীতে গবেষকেরা নাক দিয়ে এক ধরণের স্প্রে দেন ফলে ২০ মিনিটের মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবকটি সুস্থ হয়ে পড়ে।

২০১৩ সালের জুনের শেষভাগে ভারতের Dr. C. Soundara Raj ও TCR হসপিটালের তাঁর সহযোগিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলতা পায়। এখানে একজন সুস্থ মহিলার শরীরে বিষের সাথে সাদৃশ্য রেখে একধরণের রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করান এবং সাথে সাথেই মহিলাটির শরীর অবশ হয়ে যেতে থাকে। ৩০ মিনিট পরে নাক দিয়ে ঐ স্প্রে দেয়ার পরে আবার সে সুস্থ হতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে সাতদিনের সাধারণ চিকিৎসার মাথায় সে তার আগের সুস্থ জীবনে ফিরে যায়।

সাপের কামড় অনেক মারাত্মক হলেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এটি নগণ্য হিসেবে ধরা হয় কারণ এর যথাযথ কোন চিকিৎসা নেই আর যথাযথ চিকিৎসা না থাকার কারণে শতকরা ৭৫ ভাগ আক্রান্ত মানুষটি হাসপাতালে যায়না। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন লোক সাপের কামড়ের শিকার হয়। এখনো এর কোন যথাযথ চিকিৎসা আবিস্কার না হলেও গবেষকেরা মনে করছেন লেভিনের এই নতুন পদ্ধতি অনেককেই মারা যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং ধারণা করা হচ্ছে বছরে প্রায় ৯৪০০০ লোককে আর মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হবেনা!

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics