বৃষ্টির সঙ্গে মাছ!!!
সীমান্ত পারভেজ
সত্যি বৃষ্টি বা ঝড়ের সঙ্গে মাছও পড়ে আকাশ থেকে। ফ্রান্সের আবহাওয়াবিদ আন্দ্রে মেরি এমপেরি সর্বপ্রথম ঝড়ের সঙ্গে এসব জলজপ্রাণী বর্ষণের ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে গবেষণা করেন। গবেষণায় মেরি দেখেন, মূলত টর্নেডো বা ঘূর্ণিঝড়ই এই মাছ বা ব্যাঙ বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী। টর্নেডোর সময় বাতাসের শক্তিশালী ঘূর্ণি, পুকুর বা জলাশয়ের ওপর দিয়ে আসার সময় ওই পুকুর বা জলাশয়ের পানি তুলে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলজপ্রাণীও তুলে নেয়। পরে টর্নেডো লোকালয়ে আঘাত হানলে ওইসব জলজপ্রাণী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বর্ষিত হয়। তবে ঝড়ের মাত্রার ওপর এসব প্রাণীর বাঁচা-মরা নির্ভর করে। অনেক সময় ঝড়ের গতিবেগ তীব্র হলে এসব মাছ বা জলজপ্রাণী বাতাসের ঘূর্ণির মধ্যেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তবে অনেক প্রকৃতিবিজ্ঞানী আবার এ মতের সঙ্গে দ্বিমতও পোষণ করেছেন। ফ্রান্সের প্রকৃতিবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ডি লাপোর্টে ডি ক্যাস্টেল ন্যু’র মতে, সাধারণত শিং, মাগুর, কইয়ের মতো জিয়ল মাছগুলো মেঘলা আবহাওয়ার সময় নিজেদের পুরনো আবাস ছেড়ে নতুন জলাশয়ের দিকে গড়িয়ে গড়িয়ে যায়। যারা বৃষ্টিপাতের সময় এই দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত নন তাদের কাছে হয়তো মনে হতে পারে ওই মাছগুলো বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে পড়ছে। মৎস্য বৃষ্টিপাত নিয়ে কিছু রূপকথার গল্পও আছে। প্রাচীনকালে মিসরের ক্রীতদাসদের মুক্তি দেয়ার জন্য ফরাওদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ঈশ্বর ব্যাঙের বৃষ্টিপাত পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীতে। প্রাচীনকালে গ্রিক এবং রোমে মুষলধারের বৃষ্টিপাতকে ঈশ্বরের পাঠানো শাস্তি হিসেবেই মনে করা হতো। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে হয়েছিল মৎস্য ও ব্যাঙ বৃষ্টিপাত। যেমন, ১৮৬১ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি মৎস্য বৃষ্টিপাত হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ১৯০০ সালের ১৫ মে রোড আইল্যান্ডের ওলনেইভাইলে, ২৪ অক্টোবর, ২০০৯ সালে ভারতের জামনগর প্রদেশের ভানওয়াডে এবং ২০১০ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশের লাজামানুতে এমন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আর ২০০৯ সালের জুনে জাপানের ইশিকাওয়ার দ্বীপাঞ্চলে হয়েছিল ব্যাঙ বৃষ্টিপাত।
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ২০/০৬/২০১৩