বৈদ্যুতিক বান মাছ

970005_600351993308814_428831245_nবৈদ্যুতিক মাছ সমুদ্রে বাস করে। আবার কিছু প্রজাতি দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার স্বাদু পানির নদীতে পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক মাছের দেহকোষে এমন এক ধরনের পদার্থ থাকে যাতে এই মাছ ভয় পেলে বা শত্র“কে আক্রমণ করার সময় কোষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। পিটার মোলার নামে এক প্রাণীবিজ্ঞানী নানাভাবে মাছগুলো পরখ করে দেখে বুঝতে পারেন এরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহে সাড়া দিয়ে থাকে। এসব মাছ খাওয়া তো দূরের কথা, ছুঁয়ে দেখাও নিষেধ। বৈদ্যুতিক মাছ নিয়ে লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
অথৈ জলের অতলে কত যে বিচিত্র প্রাণী বাস করে তার কোনো হিসাব নেই। এসব প্রাণীর বেশিরভাগের নামই আমাদের অজানা। তবে মাঝে মধ্যে প্রাণিবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত গবেষণায় আমরা দু’একটি প্রাণীর নাম জানতে পারি। শুনে বিস্মিত হই তাদের একেকটির আকার-আকৃতি, জীবনচারের গল্প শুনে। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্রোতস্বিনী নদী ওরিনোকোর গভীর জলের অতলে বাস করে এক ধরনের বৈদ্যুতিক বান মাছ। গবেষকদের তথ্যমতে, আকার-আকৃতির কারণে এটি দেখতে বান মাছ মনে হলেও আসলে এটি পুরোপুরি বান মাছ নয়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটিকে ক্যাটফিস বা স্বাদুজলের বড় আকারের পোনামাছের নিকটবর্তী বলা যায়। স্বচ্ছজলে বাস করা এই দানবীয় মাছটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, চলাচলের সময় প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে এবং অন্য প্রাণীকে ধরাশায়ী করার জন্য এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য প্রাণীটির শরীরে আছে ছয় হাজার বিশেষ সেল। যখন শিকার ধরার জন্য অন্য প্রাণীকে হামলা করে বসে, তখন শরীর থেকে কমপক্ষে ছয়শ’ ভোল্টের বিদ্যুৎ বের হয়ে সে প্রাণীটিকে বিদ্যুতায়িত করে। তড়িৎ বান মাছটির খাবার-দাবারে তেমন কোনো অরুচি নেই। জলে বাস করা ছোট-বড় মাছ তো বটেই, খাবারের বেলায় উভচর স্তন্যপায়ী প্রাণীতে কোনো অরুচি নেই। সুযোগ পেলে পাখিও এ মাছের কবল থেকে রক্ষা পায় না। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য প্রায়ই জলের ওপরে মাথা তুলে বাতাস টেনে নেয়। মজার ব্যাপার হলো, মাছটির দৃষ্টিশক্তি অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ। চলাচল কিংবা শিকার ধরার সময় মাত্র দশ ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চারিত হয়। তবে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হলে কী হবে প্রাণীটির শরীরের সঙ্গে আছে এক ধরনের রাডার। যার মাধ্যমে মাছটি সহজেই শিকারের অস্তিত্ব এবং দূরত্ব টের পায়। বৈদ্যুতিক এ বান মাছ সাধারণত দৈর্ঘ্যে আট ফুটের মতো এবং ওজনে কুড়ি কিলোগ্রামের মতো হয়। জল কিংবা জল-স্থল উভয় স্থানে বাস করা প্রাণীর জন্য বৈদ্যুতিক বান মাছ ভয়ঙ্কর হলেও এর আঘাতে মানুষ মারা গেছে এমন কোনো ঘটানার নজির নেই। তবে মাছটির সংস্পর্শে এসে বিদ্যুাতায়িত হয়ে নাকি বেশ কয়েকজন হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে এমনটি শোনা গেছে। সুতরাং বৈদ্যুতিক বান মাছ থেকে সাবধান।
বিজ্ঞানী ভোল্টা প্রথম তাদের শনাক্ত করেন। গবেষণা করে তিনি দেখতে পান এসব মাছ কয়েকশ’ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক-এর মাধ্যমে শিকারকে হত্যা করে। আবার শত্র“র আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে অনুরূপ বৈদ্যুতিক শক সৃষ্টি করে। পিটার মোলার নামে এক প্রাণীবিজ্ঞানী বৈদ্যুতিক মাছ একটি ট্যাঙ্কে রেখে তাতে দুটো তার ডুবিয়ে স্পিকারের সাহায্যে মাছের বৈদ্যুতিক কথোপকথন বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি নানাভাবে মাছগুলো পরখ করে দেখে বুঝেছিলেন এরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহে সাড়া দিয়ে থাকে। এসব মাছ খাওয়া তো দূরের কথা, ছুঁয়ে দেখাও নিষেধ। শরীরজুড়ে রয়েছে একগাদা খুদে গর্ত। ওজনে হয় ২০ কেজি পর্যন্ত। গড় আয়ু ১৫ বছর। দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনোকো অববাহিকা, আমাজন এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ের ঘোলাজলে এবং আফ্রিকার কিছুর জায়গায় মাছটির বসবাস।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ০৫/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics