ভবিষ্যতের পৃথিবী বাদুড়ের হয়ে যাবে না তো ?!
ফারজানা হালিম নির্জন
কথায় আছে, “কারো পৌষ মাস,কারো সর্বনাশ” সবার চিন্তারাজ্য জুড়ে রয়েছে একটি ভয়াবহ ফলাফলের আশংকা। আর তা হলো,জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব পরিবেশের কী কী ক্ষতি হতে যাচ্ছে কিংবা কী কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত! কিন্তু গবেষনার ফলাফল বলছে,জলবায়ু পরিবর্তন কারো কারো জন্য সুখবরও বয়ে আনতে পারে! কিন্তু সে সুসংবাদ যে কেবলমাত্র বাদুড় সম্প্রদায়ের জন্যই!
বাদুড় পৃথিবীর একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী,যা উড়তে পারে। এরা অত্যন্ত ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন,দিনের বেলা দেখতে পায়না। তাই তখন কাজ থাকেনা বলে,অন্ধকারস্থানে উলটো হয়ে ঝুলে থাকে। নিশাচর প্রাণীর তালিকায় নথিভুক্ত হবার কারণেই,তাদের চলাফেরা শুরু হয় রাতে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ,কিন্তু তাই বলে কি জীবন থেমে থাকবে? একেবারেই না। প্রকৃতিই তাদের অন্য দিক থেকে করেছে অনন্য। শব্দশক্তির কৌশল আর নিজেদের বুদ্ধিমত্তার মিশেলে তারা খুব সাচ্ছ্যন্দেই চলাফেরা করতে পারে। বাদুড়ের কান শব্দোত্তর তরঙ্গের শুব্দ শুনতে সক্ষম। চলার সময় তারা ক্রমাগত মুখ দিয়ে শব্দোত্তর তরঙ্গের শব্দ তৈরী করে। সেই শব্দ তার চারপাশ থেকে প্রতিধ্বণিত হয়ে ফিরে আসলে তারা সেই প্রতিধ্বণি থেকেই আশেপাশের সম্ভাব্য বাধা-বিঘ্ন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে ও তা এড়িয়ে চলতে পারে। খাবারের জন্য শিকার ধরতেও বাদুড় একই পন্থা অবলম্বন করে।
জলবায়ুর পরিবর্তন বাদুড়ের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলবে,তা অবশ্যই একটি ভাবনার বিষয়। আর তাই কানাডার “ম্যক্স প্ল্যাংক ফর অরনিথোলজি ইন্সটিটিউট”এর জীববিজ্ঞানী হোল্গার জর্লিটজ এবং তাঁর সঙ্গীরা গবেষণা করেছেন,তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলাফল বাদুড় সম্প্রদায় কেমন করে গ্রহণ করবে! তাদের গবেষণার ফলাফল বলছে, বাদুড়রা কম কম্পাঙ্গের শব্দের প্রতিধ্বণি তৈরীর মাধ্যমে অনেকদূরের শিকারের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে,কিন্তু বেশি কম্পাংকের ক্ষেত্রে অতটা পারেনা।
এছাড়াও আরও একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বাদুড়দের চাইতে উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের বাদুড়রা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি পরিমাণে শিকার ধরতে সক্ষম।
বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন,এটাই কিন্তু সবচেয়ে বড় হুমকি আমাদের সবার জন্য। আর সেই অধিক তাপমাত্রাতেই কিনা বাদুড়রা বেশি সাচ্ছ্যন্দবোধ করে! তবে কি ভবিষ্যতের পৃথিবী বাদুড়ের হাতে চলে যাচ্ছে !
পারতপক্ষে চিন্তা করলে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু বাদুড়দের বেঁচে থাকার জন্য চাই খাদ্য। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেই আহারজাত প্রাণী কিংবা গাছ-গাছালির পাতা,তাদেরও তো পরিবর্তন হবে। খাবারের পরিমাণ কমে গেলে বাদুড়রা কর্তৃত্ব খাটাবেই বা কেমন করে! আরেকটি বিষয় একদম পরিষ্কার,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ‘সাউন্ড অব ফিজিক্স’-এ ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ বাদুড়দের চলাফেরার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম,সেই শব্দের ক্রিয়াকৌশলেও কিন্তু বিরাট ঝামেলা তৈরী হয়ে যাবে। তবে বাদুড়দের কিছু প্রজাতি শব্দের কম্পাংকের কিংবা তীব্রতার পার্থক্য ঘটিয়ে নিজেদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে খুব সহজেই খাবারের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই খুব পুংখানুপুংখভাবে ঘোষনা করতে পারছেন না,জলবায়ুর পরিবর্তন বাদুড়দের জন্য খুব খারাপ নাকি খুব ভাল ফলাফল বয়ে আনবে! তবে তাঁরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত,বাদুড়দের অধিকাংশ প্রজাতি কিন্তু যেকোনো পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম !