ভেজালমুক্ত ইফতারি ও সকল খাদ্য বিষমুক্ত করার দাবি

পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ যান ও কলকারখানার পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়। এছাড়াও একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক রং ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভোজ্য তেল তৈরী করা হয়। বিষাক্ত রং ব্যবহার করে সাদা ডিম লাল করা হয়। এছাড়াও পঁচা-বাসীসহ বিভিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এতে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টিসহ গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র উদ্যোগে এবং ১৭ টি সংগঠনের অংশগ্রহণে আজ ০৫ জুলাই ২০১৪, শনিবার, সকাল ১১টায় বেইলী রোডে ইফতারিসহ সকল খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত চাই-দাবীতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রথমটি খাদ্য। কিন্তু সেই খাদ্যে সামান্য মুনাফার লোভে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এখন এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল নামের নীরব ঘাতক বিষ মিশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি রয়েছে। সহজপ্রাপ্যতা, আইনী দুর্বলতা আর যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটেই চলেছে, যাতে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে।DSC_5194

রমজানে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ যান ও কলকারখানার পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়। এছাড়াও একই তেল বার বার ব্যবহার করা হয়। এসব খাবার ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ সৃষ্টিসহ গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাসায়নিক রং ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভোজ্য তেল তৈরী করা হয়। সেমাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই উৎপাদন এবং তাতে রাসাযনিক দ্রব্য মিশানো হচ্ছে। বিষাক্ত রং ব্যবহার করে সাদা ডিম লাল করা হয়। খেজুওে মিশানো হচ্ছে ফরমালিন। এছাড়াও লাল শাকের মধ্যে লাল রং গ্রহণে অল্প বয়সের শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, মাথা ধরা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

দেশে চাল, মাছ, সবজি, মসলা এবং ফলমূলে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদেও মতে, উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি পর্যায়ে বিষ মেশানো হচ্ছে খাদ্যে। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা থাকলেও আদৌও মাঠে গিয়ে কৃষককে সচেতন করে তোলার মতো কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায় না।

পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে¡ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ পীস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, পল্লীমা গ্রীণের সভাপতি মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারিক, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা প্রমুখ।

প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান বলেন- ফরমালিন কোন স্বীকৃত প্রিজারভেটিভ নয়। তাই এর কোন সহনীয় মাত্রার ধারনা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি বিষাক্ত দ্রব্য যা জনস্বাস্থ্যের জন্য আজ একটা বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবিত ফরমালিন আইনে তাই ফরমালিনের কোন সহনীয় মাত্রা রাখা উচিত হবে না। বরং এর সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা বাহানায় পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এফডিএ, এমএইচআরএ, টিজিএ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ফরমালিনের কোন সহনীয় মাত্রা নির্ধারণের চেষ্টা করেনি। কারণ যে বিষাক্ত দ্রব্য ক্যান্সার তৈরি করে, শরীরে তার সহনীয়তার প্রশ্নই আসে না।

করণীয়-
নিজের ও সšতানেরসহ সকল শিশু ও মা এবং জনগণের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সর্ব¯তরের ব্যবসায়ীদেরকে ইফতারিসহ সকল খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশানো থেকে বিরত থাকা।
খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়। এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানো এবং এসব রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশ্রিত খাদ্য বিক্রি সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজাল রোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সরকার ফরমালিনের বিষাক্ত থাবা থেকে জনগণকে বাঁচানোর জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে বিদ্যমান আইনে মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নে জরুরীভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রস্তাবিত ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন’ ২০১৪ ফরমালিনের সহনীয় মাত্রা না রাখা।
দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করা।
ভেজাল বিরোধী টিম কর্তৃক নিয়মিতভাবে খেজুরসহ অন্যান্য ফল, মুড়ি, সেমাই, রং মিশ্রিত সকল খাবার, ইত্যাদি পরীক্ষা করা এবং সকল খাদ্য মজুদকারী গুদাম/কারখানা /মোকাম পরিদর্শন করা।
খাদ্যে বিষ মিশ্রন/ভেজালকারীদের ধরার জন্য একটি সেল গঠন করে ফোন/ফ্যাক্সসহ সাধারণ মানুষের কাছে থেকে সংবাদ গ্রহণের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা।
খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সাধন।
পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা এবং এ কাজে এনবিআরের সক্ষতা বৃদ্ধি করা।
গণমাধ্যমে প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিষয়ে সচেতন করা।
শুধুমাত্র খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ভেজাল বিরোধী অভিযান বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার বিপরীতে যথেষ্ট নয়। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics