
ভেরেণ্ডা ভাজার দিন শেষ… !!!
সজীব কুমার বর্মণ
“কাজ নেই তাই বসে বসে ভেরেণ্ডা ভাজছি”- বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ। কিন্তু বাস্তবে কি তাই?বাস্তবিক অর্থে ভেরেণ্ডা ভাজার দিন শেষ। আধুনিক বিজ্ঞান তাই বলছে। ভাজার বদলে প্রক্রিয়াজাত করলেই বরং লাভ। ভেরেণ্ডার তেল ডিজেলের বিকল্প(বায়োডিজেল) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে, আর বাংলাদেশেও রয়েছে এর বিশেষ কদর।ভেরেণ্ডা বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ।বৈজ্ঞানিক নাম Jatropha curcas। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এটি ‘কচা’ বা ‘বেড়া’ গাছ নামে বহুল পরিচিত। কিছু কিছু জায়গায় ‘ভেন্না’ এবং রেড়ি নামেও পরিচিত।
ভেরেণ্ডার গাছ লম্বায় ৩০ ফুট পর্যন্ত বড় হয়। পাতার আকার অনেকটা পেঁপে গাছের পাতার মত; আকারে ছোট। ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে এলাকা ছাড়া সব জায়গাতেই এই উদ্ভিদ জন্মে। গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছর পর ফল হয়। ফল আকারে ছোট। ওপরের ভাগ খানিকটা ছুঁচাল কাঁটাওয়ালা।পরবর্তী ৫০বছর পর্যন্ত ফল দেয়!!! এবং প্রতি বছর ফলন পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে বেশি হয়। এই গাছের ফল থেকে যে বীজ পাওয়া যায় তা থেকে বিশেষ উপায়ে তেল(বায়োডিজেল) পাওয়া যায়। যা ডিজেল এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া তেল তৈরি করার সময় যে খৈল পাওয়া যায় তা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়,আর সাবানের জন্য গ্লিসারিন ও পাওয়া যায়।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের প্রধান উৎস হল পেট্রোলিয়াম। পেট্রোলিয়ামের মজুদ বাড়ছে না বরং কমছে দিনদিন। সেইসাথে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মোকাবেলা করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার বাড়ছে জ্বালানি তেলের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে সকল জ্বালানি তেলের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এজন্যই পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানীরা বিকল্প জ্বালানি উৎসের সন্ধান করছেন। তারই প্রেক্ষিতে সৌরশক্তি, বায়ু-শক্তি, জলবিদ্যুৎ সহ বেশ কয়েকটি উৎস থেকে জ্বালানি উৎপাদন করছে বিশ্বের অনেক দেশ৷ সেইসাথে বায়োফুয়েল নিয়েও ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৬ সাল থেকে মায়ানমার ডিজেলের বিকল্প হিসেবে ভেরেণ্ডার তেল ব্যবহার করছে। এছাড়াও ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে ভেরেণ্ডার বাণিজ্যিক চাষ করছে।বাংলাদেশের, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মাটি ভেরেণ্ডা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রশাসন এবং সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলে ভেরেণ্ডার বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের জন্য প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ ঘাটতি দিতে হয় তার অনেকটাই পূরন করা সম্ভব।