সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ার !!!
আমরা সকলেই জানি, বাদুঁড়ই ত্রকমাত্র স্তন্যপায়ী ( Mammal ) যারা উড়তে পারে । কিন্তু আশরাফ আতরাফের ব্যাপার তো সবখানেই আছে । কোন জায়গায় হয়তো প্রভাব খাটানোকে নিয়ে , কোথাও হয়তো বিষের ভয়াল থাবার তীব্রতা বিচার করে মনোনিত হয় কে সেই বাস্তুতন্ত্রের নেতৃত্ব দিবে ।বাদুঁড় সমাজে কিসের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করে এখন অবধি আমরা অবগত নই । তবে কখনো যদি নেতা নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে গন্ডগোল বাধে এবং আমার কাছে সমাধানের জন্য আসে তাহলে আমি হয়তো ভ্যাম্পায়ারকেই মনোনিত করবো।জানিনা কেন যে এত ভাল লাগে তাকে, হয়তো বিদ্রোহীর লহূ আছে তার সঞ্চালনে । কেননা আমিও যে বিদ্রোহী , বিদ্রোহী আমি প্রচলিত নিয়ম নীতিতে।বিশ্বাস করি, বিশেষ কিছু করে বিশেষ পরিচিতি লাভে । হয়তো সেই জন্যে । ভ্যাম্পায়ার বাঘ , সিংহ , হায়েনার হায়েনানীতিরও ঊর্ধ্বে ।কারণ,এরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী যারা সম্পুর্নভাবে রক্তের উপর বেঁচে থাকে ।বৈজ্ঞানিক নাম desmodus rotundus হলেও ব্রাম স্কোকার এর কাউন্ট ড্রাকুলার নামে এদের ড্রাকুলা ডাকা হয়না। এই ঘাতক দিনে ঘুমায় যেখানে কোনো আলো নেই । নিজেদের পা কে গুহার ছাদের সাথে লাগিয়ে ঝুলে থাকে । আদর্শিকভাবে তারা কলোনি করে থাকে । সাধারণত এক কলোনিতে ১০০ টি বাদুড় থাকে এবং এক গ্রুপে প্রায় ১০০০ টি । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ১০০ টি বাদুড়ের একটি কলোনি বছরে প্রায় ৯০ টি গরুর সমান রক্ত পাণ করে । ওদের শিকার ধরার ধরণও অত্যাধুনিক । প্রথমে উড়ে এসে নিচে বসে আস্তে আস্তে ঘুমন্ত শিকারের (ঘুমন্ত ঘোড়া, গরূ, এমনকি সুযোগে মানুষকেও আক্রমণ করে ) কাছে গিয়ে করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে হিট সেন্সর (Heat sensor) লাগিয়ে পরীক্ষা চালায় রক্ত সঞ্চালনের সন্ধানে । বলা বাহুল্য যে, হিট সেন্সর হচ্ছে এমন এক ডিভাইস যা দিয়ে চামড়ার নিচে প্রবাহিত গরম রক্তনালীকে সনাক্ত করতে পারে । রক্ত নালী সনাক্ত করে তাদের সুতীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে কামড় দেয় এবং নালী দিয়ে রক্ত প্রস্রবণ হয় । প্রস্রবিত রক্ত ভ্যাম্পায়ার প্রায় ৩০ মিনিট ধরে পান করে এবং বিভিন্ন বিষাক্ত জিনিস ও রক্ততঞ্চনরোধক (Heparin ) নিঃসৃ্ত করে রক্ততঞ্চনকে বাধা দেয় । প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ভ্যাম্পায়ার রক্ত চুষে একটি প্রাণীকে মেরে ফেলে । কিন্তু আসল সত্য হলো, রক্তনালীকে ছিদ্র করে তারা যে বিষাক্ত জিনিস নিঃসৃ্ত করে তা দিয়ে বিভিন্ন ভয়ানক রোগ তৈরি করে এবং তা দিয়েই প্রাণীদের মেরে ফেলে ।সাধারণত এই ভ্যাম্পায়ার বাদুড়গুলো পাওয়া যায় মেক্সিকোর উপকূলীয় এলাকায়, সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে ।
লেখকঃ ফখরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়,গ্রুপ ফর কনজার্ভেশন এন্ড রিচার্স অফ ব্যাট (জি চি আর বি) http://www.gcrbbd.org