মজার প্রাণী শিম্পাঞ্জি
আমির খসরু সেলিম
মানুষ যখন প্রথম এই প্রাণীটিকে খুঁজে পেয়েছিল তখন একে বানর ছাড়া আর কিছু ভাবেনি। তারপর এর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পালা ঘনিষ্ঠ হতেই আবিষ্কার হলো, আরে এত মানুষেরই জাতভাই! আকৃতিগত সাদৃশ্য না থাকলেও অনেকদিক দিয়েই এই প্রাণীটার সঙ্গে মানুষের অনেক মিল। জি..হ্যাঁ, বলা হচ্ছে শিম্পাঞ্জির কথা। এরা বিভিন্নভাবে মানুষের নিকটাত্মীয়। শতকরা ৯৯ ভাগ শিম্পাঞ্জির জিন সংকেত মানুষের ঠিক অনুরূপ। স্বভাবেও এরা মানুষের মতোই সামাজিক। মানুষের মতোই এরা ভাবাবেগ প্রকাশ করতে পারে, নিজের স্বজাতির অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, প্রয়োজনমাফিক ছোটখাটো হাতিয়ার বানাতে পারে, এমনকি যুদ্ধেও অংশ নিতে পারে। শিম্পাঞ্জিরা খুবই বুদ্ধিমান। এরা মানুষ এবং স্বজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতে পারে। কোনো নির্দেশ সামান্য প্রশিক্ষণেই এরা মেনে চলতে পারে। হলিউডি সিনেমায় শিম্পাঞ্জির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এই প্রাণীটিকে মূল চরিত্র করে অনেক জননন্দিত চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে সেখানে। শিম্পাঞ্জির সঙ্গে মানুষের আরেকটি বড় মিল হলো উভয়েরই লেজ নেই। শিম্পাঞ্জিরা সারাদিনের অর্ধেক সময় কাটায় মাটিতে আর বাকি অর্ধেক সময় কাটায় গাছের ডালে। ওরা গাছের ডালে ডালপালা আর লতাপাতা দিয়ে এক রকমের বাসা তৈরি করে সেখানেই রাতের ঘুমটা সেরে নেয়। মজার ব্যাপার হলো, প্রতিরাতেই ওরা নতুন বাসা তৈরি করে। পুরনো বাসায় আরেকটা রাত কাটানোর মোটেই আগ্রহ থাকে না ওদের। বন দখল, চামড়ার লোভে হত্যা, মানুষের তৈরি করা এ রকম নানা কারণে বুনো শিম্পাঞ্জির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। সবমিলিয়ে ওদের নাম উঠে গেছে বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায়। ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী জেন গুডওল শিম্পাঞ্জি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। দীর্ঘকাল সময় দিয়েছেন এদের নিয়ে। এদের শিকার করা ও হাতিয়ার ব্যবহারের অনেক প্রামাণ্য বিবরণ দিয়েছেন তিনি।
আসল বুনো পরিবেশে বাস করে এমন শিম্পাঞ্জি দলকে ইংরেজিতে বলে ‘কমিউনিটি’। শিম্পাঞ্জিরা আবার ৬ থেকে ১০টি উপদলে বিভক্ত। এমন উপদলকে বলে ‘ব্যান্ডস’। শিম্পঞ্জিরাওশিম্পঞ্জিরাও অনেক সময় দল পাল্টে অন্য দলে যোগ দেয় ! বুনো শিম্পাঞ্জি গড়ে ৩০ বছর বাঁচে। এদের বয়স যতই বাড়ে ততই কালো হতে থাকে ওদের ত্বক।
শিম্পাঞ্জিরা ফলমূল, পাতা, কুঁড়ি, পিঁপড়ে, ডিম, উকুন, ইত্যাদি খায়। কখনো এরা বানর, ইঁদুর, ছোটজাতের হরিণ ইত্যাদিও শিকার করে খায়। এদের সারাদিনের একটা বড় সময় কাটে দলের অন্য সদস্যদের দেখাশোনা করে। এরা এ সময় একে অপরের গায়ে জমা অবাঞ্ছিত ময়লা, উকুন ইত্যাদি পরিষ্কার করে দেয়। চিড়িয়াখানায় রাখা শিম্পাঞ্জির খাঁচার দিকে তাকালেও এ রকম দৃশ্য চোখে পড়বে। মানুষের কারণেই ওদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন, মানুষই পারে ওদের নিরাপত্তা আর বাঁচার পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে।