মাংসখেকো উদ্ভিদ

KONICA MINOLTA DIGITAL CAMERAযেসব এলাকার মাটিতে পুষ্টি উপাদান কম [বিশেষ করে নাইট্রোজেন] এবং মাটি ভেজা থাকে, সেসব অঞ্চলে মাংসখেকো উদ্ভিদ বেশি জন্ম নেয়। তাই মাটি থেকে পরিপূর্ণ পুষ্টি না পাওয়ায় খাবারের অভাবটা উদ্ভিদ পোকামাকড় খেয়ে মিটিয়ে থাকে।
মাংসখেকো উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্ভিদ হলো কলস উদ্ভিদ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, বল্গাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এই উদ্ভিদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে সূর্য শিশির, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামের একাধিক মাংসখেকো উদ্ভিদ আছে। দক্ষিণ আমেরিকাতে মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া এশিয়ার কিছু দেশেও এর দেখা মেলে। এ উদ্ভিদগুলোর মধ্যে কলস উদ্ভিদ একটু বেশি ভয়ানকই বটে! যেহেতু গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো, তাই এর নামও কলস উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের ওপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লাল রঙের চমৎকার একটি অংশ থাকে। এই অংশে মধুর মতো রস নিঃসৃত হয়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের ওপরে বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে যায় বিপত্তি। কারণ পিচ্ছিল কলসের ওপর বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের এক ধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।
তবে এ থেকেও ভয়ানক মাংসখেকো উদ্ভিদ ‘ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ’ আমেরিকার সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনায় এই উদ্ভিদগুলো ব্যাপকভাবে দেখতে পাওয়া যায়। উদ্ভিদগুলো প্রায় এক ফুটের মতো লম্বা হয়। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো। এই পাতাগুলো তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে ছোট ছোট অনেক লোম থাকে। পোকামাকড় যদি কখনও এই পাতার ওপর বসে তাহলে এই পাতা মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ভেনাস ট্র্যাপের পাতা খুবই সংবেদনশীল। তাই আধা সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে। ঠিক এ সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। এরপর আর কী! পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে ভেনাস ট্র্যাপের ১০ দিনের মতো সময় লাগে। একটি পোকা হজম শেষ হলে ওই পাতাটা আবার খুলে যায় নতুন কোনো পোকাকে ধরার আশায়। উদ্ভিদটির একটি পাতা একসঙ্গে তিন থেকে চারটি পোকা ধরতে পারে। এতে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর নতুন পাতা শিকারের কাজ শুরু করে। প্রাকৃতিকভাবে ভেনাস ট্র্যাপের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন হয়। আর তারা যে পোকামাকড় শিকার করে তা জন্মে সাধারণত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম থাকে। তাই এই উদ্ভিদকে পোকামাকড় খেয়ে নাইট্রোজেন জোগাড় করতে হয়। কিছু কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এসব উদ্ভিদ মাংসভূক হয়েছে; কিন্তু অনেকেই বিজ্ঞানীদের এই মতবাদ সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন।

জুনায়েদ তানভীর

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics