মায়াময় গোলাপি রঙ্গন

ঈদের ছুটি চলছে। এখনও শহরের যান্ত্রিকতা আর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার চাপে মাথার চুল পড়ে যাবার মত অবস্থায়  যাইনি। ফাঁকা ঢাকা শহরের রাস্তায় নেমে পরা যায় যখন তখন। ঈদের ছুটি তাই সাধের ক্যামেরা টাও ব্যাগবন্দী করে রেখেছিলাম। সেদিন বিকেলে বন্ধু হাসিবুরের বাসায় যাবো, ঈদ পরবর্তী আড়মোড়া ভাঙাই উদ্দেশ্য। ফিটফাট তৈরি হয়ে বিকেলের রোদে চোখ বুলিয়ে বেরিয়ে পরবো হঠাৎ কি মনে হলো ব্যাগবন্দী আমার সাধের ক্যামেরা টাকেও সঙ্গী করলাম।রিকশায় করে বিনা জ্যাম জটে পৌঁছে গেলাম বন্ধুর বাসায়। যথারীতি  আড্ডাস্থল হাসিবুরের ছাদ। ছাদে আড্ডা চলছে ,চলছে ফটো সেশন, একবার হাসিবুরের খোঁচা খোঁচা দাড়িয়াল চেহারায় লেন্স ধরছি তো আর একবার আকাশের দিকে। হঠাৎ চোখ আঁটকে গেল ছাদের একটা টবে, গোলাপি আভায় শোভা ছড়াচ্ছে গাছে ছেয়ে থাকা গোলাপি গোলাপি রঙ্গন। ক্যামেরার লেন্সটা আমার অজান্তেই টবের দিকে তাক হলো যেন। বিকেলের রোদে খোলা আকাশের নিচে ইট কাঠের এই শহরের এক ছাদে এমন সৌন্দর্যের এমন হঠাৎ আলিঙ্গন পাবো ভাবিনি। যাইহোক, নিজের বর্ণনা আর না বাড়িয়ে রঙ্গনের রঙের মধ্যে বরং ডুবি একটু। beauty
 রঙ্গন মূলত দক্ষিন ভারত ও শ্রি-লংকার একটি সহজ লভ্য ফুলের প্রজাতি।এটি দক্ষিন ফ্লোরিডার বাগান গুলোতেও প্রচুর দেখা যায়।ইংরেজি নাম JUNGLE GERANIUM অথবা FLAME OF THE WOOD- JUNGLE FLAME । বৈজ্ঞানিক নামঃ  Ixora coccinea।  আজকাল ঢাকাসহ বাংলাদেশের অনেক স্থানে ৰুদ্র আকৃতির রঙ্গন ফুলের গাছ চোখে পড়ে।‘রুবিয়েসি’(Rubiaceae) গোত্রভুক্ত রঙ্গন শুধু লাল বর্ণেরই হয় নাঃ গোলাপি,হলুদ,কমলা ও সাদা বর্ণেরও হয়। অন্যান্য রঙের প্রায় সব প্রজাতির রঙ্গন এই উপমহাদেশে জন্মে। বাংলাদেশের অনেক স্থানে বেশ ক্ষুদ্র আকৃতির রঙ্গন ফুলের গাছও চোখে পড়ে। রঙ্গন গাছ জন্মানো খুবই সহজ। ৰুদ্রাকৃতির সবুজ ফল থেকে গাছের চারা জন্মানো যায় কিংবা পরিণত গাছের ডাল নিচ থেকে কেটে মাটিতে রোপণ করে নিয়মিত জল দিয়ে পরিচর্যা করলে ক’দিন পরই মূল গজায়। জোড় কলম করেও রঙ্গনের বংশবিসত্মার করা যায়।এটি একটি ঘন,চির-সবুজ গুল্ম।এটা সাধারণত ৪-৬ ফিট(১,২-২ মি) লম্বা হয়ে থাকে যদিও এটি ১২ ফিট(৩,৬ মি) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।মসৃণ,উজ্জ্বল ও আয়তকার পাতা গুলো ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং একান্তর পত্র বিন্যাস দেখা যায়।ছোট নলাকার ও উজ্জ্বল লাল, গোলাপি, হলুদ অথবা সাদা বর্ণের ফুল গুচ্ছাকারে ঘন ভাবে সজ্জিত থাকে এবং সারা বছর জুড়েই এতে ফুল থাকে।
যদিও এর প্রায় ৫০০ প্রজাতি আছে এরমধ্যে Ixora গণ টি চাষ করা হয়ে থাকে যার বৈজ্ঞানিক নাম I. coccinea।এটি সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায়,ফুলের কেয়ারি তৈরিতে কিংবা সাধারণ গুল্ম হিসেবে চাষ করা হয়।ঠান্ডা আবহাওয়ায় এটি গ্রিনহাউজের ভিতর চাষ হয়। এটি ফুলের রং(হলুদ,কমলা,গোলাপি) ও আকৃতি ভেদে নানা নামে পরিচিত।
 ফুল,পাতা,মূল এবং কান্ড বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।এর ফল গুলো পুরোপুরি পেকে গেলে পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
গোলাম রাব্বানী রায়হান
ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার , প্রকৃতি পর্যবেক্ষক।
মৃত্তিকা ,পানি ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics