মিঠাপানির কড়ি কাইট্রা
আমরা হয়ত সবাই খরগোশ ও কাছিমের গল্প শুনেছি বা জানি । দেখেছিও হয়তো অনেকেই ।মিঠাপানির কাছিম খুব নিরীহ , শান্ত প্রাণী ।দেখতেও লাজুক , মায়া মায়া ভাব ।
পৃথিবীতে ৩২৮ প্রজাতির মিঠাপানির কাছিমের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশে আছে ২৩ টি মিঠাপানির কাছিম ।
বাংলাদেশের ২৩ প্রজাতির কাছিমের মধ্যে কড়ি কাইট্রা ( Roofed Turtle ) বেশী দেখা যায় । উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে এরা সব রকমের মিঠাপানির জলায় থাকতে পারে । নদী-নালা , খাল-বিল ,এমন কি পুকুরেও ।
কড়ি কাইট্রা খুব শান্ত স্বভাবের প্রাণী । কাওকে আক্রমণ করেনা বরং আক্রান্ত হলে পা –মাথা লেজ বর্মের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় । কড়ি কাইট্রার কৃত্তিকা-বর্ম (carapace ) কালচে বাদামি , বর্মের উপর ৩ টি উঁচু খাঁজ কাটা আছে । নিচের বক্ষস্ত্রান (plastron ) হলুদ ও প্রতিটি আঁশে (scute) কালো দাগযুক্ত । গলা ও পায়ে হলুদ রেখা আছে । পায়ে নখর আছে তবে ধারালো নয় । মুখে পাখির ঠোঁটের-মত শক্ত আঁশ আছে । কড়ি কাইট্রা লম্বায় ২৩ সেমি. হয়ে থাকে । পুরুষ কড়ি কাইট্রা স্ত্রী কড়ি কাইট্রার চেয়ে আকারে ছোট হয় ।
কড়ি কাইট্রার জীবন চক্র তেমন জানা যায়নি । তবে শীতকালে এরা ডিম দিয়ে থাকে । কড়ি কাইট্রার ডিম লম্বাটে শক্ত সাদা আবরণে ঢাকা । এরা সাধারণত ছোট মাছ খায় । উদ্ভিদ হতে উৎপন্ন খাবারও একুরিয়ামে খেয়ে থাকে ।
বাংলাদেশে ৪ প্রজাতির কড়ি কাইট্রা আছে । বড় কড়ি কাইট্রা (P.smithii ) , সিলেটী কড়ি কাইট্রা ( P.sylhetensis) , মাঝারী কড়ি কাইট্রা (P.tentoria ) , কড়ি কাইট্রা ( P.tecta ) ।
এক সময় সারা বাংলাদেশেই কড়ি কাইট্রা দেখা যেত । শীতকালে সকালে গ্রামের কোন নদীর পারে গেলে, দেখা যেত কাছিমরা সব সার বেধে পানিতে ভাসমান কোন কাঠ বা বাঁশের উপর বা নদীর চরে বসে রোদ পোহাচ্ছে। ছোট বাচ্চারা খেলা ছলে পানিতে ঢিল ছুড়লে ,ঝপ করে পানিতে নেমে ডুপ দিত । নদীর চরে খুঁজলে কড়ি কাইট্রার ডিমও পাওয়া যেত । এখন আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না ।
বাংলাদেশের খুব কম অঞ্চলেই কোনরকমে টিকে আছে এরা ।তার পরেও কড়ি কাইট্রা বাংলাদেশ IUCN এর বিপন্ন তালিকা বহির্ভূত । গল্পের সেই কচ্ছপ খরগোশকে হার মানাতে পালেও , হেরে গেছে মানুষের কাছে । অবাধে জলাভূমি ধ্বংস , শিকারের ফলে খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে সকল প্রকার মিঠাপানির কাছিম ।
জলা শুকিয়ে , বিষ দিয়ে মাছ আহরণ , জলার জলজ পরিবেশ ধ্বংস হবার ফলে কাছিম হারাচ্ছে তার বাসস্থান । বিপন্ন হচ্ছে কাছিম প্রজাতি । দ্রুত এদের সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেয়া না হল , আমরা মিঠাপানির কুমিরের মত হারাব এবার মিঠাপানির কাছিম ।
লেখা ও ছবি – ঋজু আজম ।