মেটে তিতির

মেটে তিতির (Francolinus pondicerianus) (ইংরেজি: Grey Francolin) বা ধূসর তিতির Phasianidae (ফ্যাজিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Francolinus(ফ্র্যাঙ্কোলিনাস) গণের এক প্রজাতির বুনো তিতির। মেটে তিতিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পুদুচেরির খুদে মুরগী । আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বান্যুনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এরা প্রাক্তন আবাসিক পাখি। বর্তমানে কোন নমুনা দেখার তথ্য জানা না থাকলেও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

800px-Grey_Francolinএককালে ঢাকার তৃণভূমিতে দেখা যেত, এখন নেই। বাংলাদেশের একমাত্র নমুনা ১৯শতকে পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।মেটে তিতিরের মোট তিনটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।যার মধ্যে বাংলাদেশে ছিল F. p. interpositus ।অন্য দুটি উপপ্রজাতি হল F. p. mecranensis  ও F. p. pondicerianus

মেটে তিতির ভোঁতা লেজের ছোট মুরগীর মত ধূসর ভূচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৩ সেন্টিমিটার, ওজন ২৭৫ গ্রাম, ডানা ১৪.৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৫ সেন্টিমিটার, পা ৪ সেন্টিমিটার ও লেজ ৮.৫ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা; অনুজ্জ্বল কমলা মুখে স্পষ্ট কালো চক্ষু রেখা। পিঙ্গল-বাদামী চোখ। সরু কালো মালাসহ হালকা পীতাভ গলা। দেহতলে কালচে বাদামি সরু ডোরা দেখা যায়। এর রূপালি ঠোঁটের নিচের পাটি অপেক্ষাকৃত বেশি কালচে। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল। ওড়ার সময় হালকা পীত অবসারনী ও লেজের প্রান্ত পালকের তামাটে কিনারা চোখে পড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ তিতিরের চেহারা অভিন্ন। উপপ্রজাতিভেদে মেটে তিতিরের পালকের রঙে বিভিন্নতা দেখা যায়। মুখে কমলা ছোপের গাঢ়ত্ব pondicerianus উপপ্রজাতির সবচেয়ে বেশি, interpositus উপপ্রজাতির একটু ফিকে আর mecranensis উপপ্রজাতির ক্ষেত্রে তা প্রায় সাদাটে।

মেটে তিতির সাধারণত শুকনো তৃণভূমি, ক্ষেত-খামার, ক্ষুদ্র ঝোপ ও বালিয়াড়িতে বিচরণ করে। আর্দ্র এলাকা এদের পছন্দ নয়। সচরাচর জোড়ায় জোড়ায় বা ৪-৮টি পাখির পারিবারিক দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা ঠোঁট ও পা দিয়ে মাটি আঁচড়ে খাবার খোঁজে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, আগাছার বীজ, শস্যদানা, ঘাসের ডগা ও রসালো ফল। ডানা দ্রুত ঝাপটে কিছুক্ষণ ওড়ার পর কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকে, তারপর আবার ডানা চালায়। তবে ওড়ার চেয়ে হেঁটে বেড়ানো পছন্দ করে বেশি। রাতে ছোট কাঁটাগাছ অথবা ঘন ঝোপের নিচে থাকে।

মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস মেটে তিতিরের প্রজনন মৌসুম। এরা কাঁটাঘেরা ঝোপ বা পাথরের ফাঁকে ঘাস-পাতা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে ৪-৯টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-হালকা পীত রঙের হয়। শুধু স্ত্রী তিতির ডিমে তা দেয়। ২১-২৩ দিন পর ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics