রথের মেলায় শাবিপ্রবি'র শালিক !!!!
অনিমেষ ঘোষ, সিলেট থেকেঃ
সিলেট নগরীর রিকাবীবাজারে চলছে ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা। প্রতিবারের মতন এবারেও উঠেছিল বিভিন্ন পাখি’র পসরা। এসব পাখি’র মধ্যে অধিকাংশই ছিল ‘বন্যপাখি’ যা কিনা বাংলাদেশ বন্যপ্রানি সংরক্ষন আইন (২০১২) অনুসারে কেনাবেচা করা নিষিদ্ধ । এমন পরিস্থিতিতে গত ১২ জুলাই শাবিপ্রবি’র গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি, সিকৃবি’র প্রাধিকার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (সিলেট শাখা) যৌথভাবে পরিচালনা করে এক ঝটিকা অভিযান। অভিযানের সময় মেলায় শত শত বন্যপাখি দেখা গেলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে এই সব বন্যপাখি বেচাকেনা বন্ধ হয়।
কিন্তু এ গল্পের শেষ এখানে হলেই ভাল হত। কিন্তু পরবর্তীতে এখান থেকেই বেরিয়ে আসে আরেক সত্য, আর তা হল এই বন্যপাখি বেচাকেনা’র একটা বড় উৎস হিসেবে ধরা হয়ে থাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে। রথের মেলায় আগত বন্যপাখি’র মধ্যে যে পাখি সর্বাধিক সংখ্যায় বিক্রি হয়ে থাকে সেটি হল -‘শালিক’।
মূলত, শালিক’কে ময়না পাখি নামে সাধারন মানুষের কাছে বিক্রি করা হয় বলেই এর এত চাহিদা। আর শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যে পাখি সবচাইতে বেশি দেখা যায় সেটি হল এই ‘শালিক’ পাখি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রথের মেলায় আনা শালিক পাখি’র একটা বড় অংশই ক্যাম্পাসের পিছনে অবস্থিত পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পাখি বেচা কেনায় যারা জড়িত তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ও বিকাল বেলা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার ও হল সংলগ্ন পাহাড়ে যখন পাখিগুলো আসে তখন এক ধরনের ফাদ তৈরি করে এই পাখি গুলো ধরা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় ‘জাল’কে ফাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ধরতে গিয়ে অনেক সময় পাখি’র পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একরকম প্রশাসনের চোখে ফাকি দিয়ে এই পাখিগুলো ধরা হয়ে থাকে। ধরার পর পাখিগুলোকে খাঁচা বন্দী করে মেলায় নিয়ে আসা হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুধু ‘রথের মেলা’ই নয়। সিলেটের স্থানীয় বাজারেও এই শালিক পাখিকে ময়না পাখি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এছাড়া ‘শালিক পাখি’ ধরতে গিয়ে অন্য পাখি ধরা পরলে সেটিও ধরে এনে বাজারে বিক্রি করা হয়।
এ ব্যাপারে গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’র গবেষণা পরিষদের সদস্য রুবাইয়া জাহান বানি জানান বাংলাদেশ বন্যপ্রানি আইন (২০১২)’র ধারা ৬ এর উপধারা ১ অনুযায়ী এভাবে বন্যপ্রানি ধরা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সংগঠনটির সাধারন সম্পাদক রাফসান হোসাইন জানান, এ ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন’কে জানানো হয়েছে , এবং এই ধরনের ঘটনা দেখা মাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই ধরনের কোনো ঘটনা দেখা মাত্র ০১৬৮৫০৬১৮৭৮ নাম্বারে জানানোর জন্যে সকলের প্রতি আহবান জানান ।
এ ব্যাপারে কথা বলতে পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলবে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আমরা হয়ত এই পাখিগুলোকে আর দেখতে পারব না।’ এছাড়া বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকার জানান, ‘ক্যাম্পাসের এইধরনের সম্পদ রক্ষা করতে হলে সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার ফাহমি হাসান জানান তিনি ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সিকিউরিটি ইনচার্জ ও গার্ডদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যাপারে প্রশাসন সতর্ক থাকবে বলে তিনি জানান।