
রিও-নিগ্রো আর সলিমস – ব্রাজিলের রহস্য
সিফাত তাহজিবা
ব্রাজিল!!! এবারের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক। অনেকেরই প্রিয় এই পেলে-নেইমারের ব্রাজিল শুধুমাত্র যে ফুটবলের বিস্ময়কর প্রতিভার জন্ম দিয়েছে, তা নয়।দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির রুপও সবার নজর কাড়ে! বিখ্যাত আমাজন বনটির বেশিরভাগ অংশ কিন্তু ব্রাজিলের মধ্যেই পড়েছে।আমাজনের গহীনে বিভিন্ন সংস্কৃতির আদিবাসী, জংলী, অনেক রকম প্রজাতির জন্তু-জানোয়ার ছাড়াও ঘন সবুজ বনটির সাথে রহস্যময়তার মিশেল যে কোন দুঃসাহসিক অভিযাত্রীকে হাতছানি নিয়ে ডাকবে !!
রিও-নিগ্রো(Rio-Negro) এবং সলিমস(Solimoes),আমাজনের নদীগুলোর দুটি বৃহত্তম উপনদী। যা আসলেই কিছুটা বিস্ময়কর!! কারণ,এ দুটি উপনদীর পানির রং ভিন্ন আর প্রবাহিত হয়ে একই জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। আবার হয়ও নি। আসলে রিও-নিগ্রো এবং সলিমস উপনদীর পানি কখনোই মেশে না!খুব সহজেই আলাদাভাবে চিন্হিত করা যায়! ঠিক যেনো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে উপনদী দুটোর মাঝেও বিশাল দ্বন্দ্ব কাজ করছে!!
উত্তর ব্রাজিলের ম্যানাউস শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, পেরুর সীমান্তে কাছাকাছি রিও-নিগ্রো এবং সলিমসের মোহনা!! এই মানাউস শহরেই কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের একটি ভেন্যু রয়েছে; আমাজোনিয়া অ্যারেনা! অনেকে এই নদীর মোহনাকে “Meeting of Waters” বলে আখ্যাযয়িত করেছেন! উপনদী দুটোর ছবি দেখলে যে কেউ চমকে উঠবেন, মনে হবে যেনো দু’রকমের কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে!!
হালকা রঙিন পানির উপনদীটি হলো সলিমস(Solimoes) । আন্দিজ পর্বত থেকে আমাজনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসা পানির সাথে পলি মাটি,কাদা,বালির মিশ্রণ এই উপনদীকে অনেকটা ফ্রেঞ্ছ কফি ‘Café au lait’ এর মত রং উপহার দিয়েছে! একে ‘সাদা পানির নদী‘ অথবা “white water river” ও বলা হয়ে থাকে! প্রায় ৮০ কিলোমিটার চওড়া সলিমস ১৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত!!
ছবিতে গাঢ় অন্ধকারাচ্ছন্ন পানির নদীটি হলো রিও-নিগ্রো(Rio Negro), প্রায় ২২৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উপনদীর ৮৫০ মাইল ব্রাজিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে! এর কিছু অংশ আবার কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলার মাঝে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে কাজ করছে! আমাজনের ভিতরে বয়ে চলা এই উপনদীর পানির সাথে দ্রবীভুত আর মিশ্রিত হওয়া পত্রক,গুল্ম,লতাপাতা,উদ্ভিদের জন্যই এর রং কালো চায়ের লিকারের মতন!! প্রায় ৮০০-৯০০ প্রজাতির মাছ এই উপনদীতে পাওয়া যায়।
অদ্ভুত হলেও সত্যি যে, রিও নিগ্রোর পানি কোনরূপ পলল মাটি বহন করে না!! ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটের(European Space Agency website), মতে রিও নিগ্রো হলো বিশ্বের সবচেয়ে পরিষ্কার প্রাকৃতিক জলের নদীগুলোর মধ্যে একটি!! মেঘমুক্ত সূর্যস্নাত দিনে,রিও-নিগ্রো নদীর নিচে ৯ মিটারেরও বেশি অবলোকন করা যায়!
এখন আসুন জেনে নেই,রিও-নিগ্রো এবং সলিমসের এরূপ আচরণের কারণ!
এদের অমিশ্রিত থাকার কারণ হলো, নদীদুটোর মধ্যে পানির তাপমাত্রা, প্রবাহমান পানির বেগ আর পানির ঘনত্বের তীব্র পার্থক্য! সলিমস হলো রিও-নিগ্রোর চাইতে দ্রতগতির,অধিক ঘনত্বের,অতিমাত্রায় ঠান্ডা পানির উপনদী, যা ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘন্টায় ৪ থেকে ৬ কিলোমিটার বেগে বয়ে চলে।
অন্যদিকে,উষ্ণতর ও তুলনামূলকভাবে মন্থর গতির রিও-নিগ্রো বয়ে চলে ঘন্টায় ২ কিলোমিটার এবং পানির তাপমাত্রা প্রায় সবসময়ই ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে! এই তারতম্যগুলোর জন্যই পানির মিশ্রণ ভালোভাবে হতে পারে না।এই দুটি উপনদী পাশাপাশি প্রায় ৬ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে বয়ে চলে গঠন করেছে আমাদের এই গ্রহের বৃহত্তম নদী আমাজন!