রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় ; প্যারাবন সৃজনে আসছে না জাপানের সেই বৃক্ষপ্রেমী দল

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া

কক্সবাজার উপকূলে এবার প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) সৃজন করতে আসছে না জাপানের বৃক্ষপ্রেমী দলটি। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হলে প্রতিবছর প্যারাবন সৃজন করতে সুদূর জাপান থেকে ছুটে আসত দলটি। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় থাকায় এবার তাদের সফর বাতিল করা হয়েছে।
জাপানের বৃক্ষপ্রেমী দলটি এবার বাংলাদেশে না আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে ওয়েস্কা ইন্টারন্যাশনাল চকরিয়ার ব্যবস্থাপক হামিদুল হক মানিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছর ২০-২৫ জনের একটি জাপানি স্বেচ্ছাসেবক দল চকরিয়ায় আসত। তারা ইতিপূর্বে উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা ও রামপুর মৌজায় জেগে ওঠা চরে প্যারাবন সৃজন করে আসছেন। জাপানের এ দল গতবছরও এখানে এসে প্যারাবন সৃজন করে।’Capture
তিনি জানান, বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলে জাপান দূতাবাস থেকে বৃক্ষপ্রেমী দলটিকে বাংলাদেশে আসতে বারণ করা হয়েছে। তবে দলটি আসতে না পারলেও উপকূলে প্যারাবন সৃজন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তাদের না আসার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হোছাইন বলেন, ‘প্রতিবছর প্যারাবন সৃজনে বৃক্ষপ্রেমী দলটি আসত। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করত। এ সময় তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব তুলে ধরে ক্লাস নিত।’
পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম চকরিয়ার সহ-সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হওয়া চকরিয়ায় উপমহাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবনের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে উপকূলীয় চরে বাইন, কেওড়াসহ লবণসহিষ্ণু হরেক প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। এ সবুজ বেস্টনী ঘুরে দেখলে মনে হয় চকরিয়ার উপকূলজুড়ে যেন আগের সেই সুন্দরবনের আবহ ফিরে আসছে।’
উল্লেখ্য, জাপানের অর্থায়নে সে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়েস্কা ইন্টারন্যাশনালের হয়ে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক প্রাণ ও সম্পদহানির পর ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ঘোর বর্ষায় বৃক্ষরোপণ মৌসুমে (জুন-জুলাই মাসের মধ্যে) কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলে প্যারাবন সৃজন করে আসছিল একদল বৃক্ষপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবক। এ পর্যন্ত সংস্থাটির পক্ষ থেকে চকরিয়ার উপকূলে জেগে ওঠা প্রায় ৬ হাজার একর চরে ১ কোটি ৮০ লাখ চারা রোপণ করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics