রিলামপাগো দে কাতাতুম্বো, আলোক-উৎসবে স্বাগতম !
ফারজানা হালিম নির্জন
ক্যারিবীয় সাগরের তীর ঘেষা দেশ ভেনেজুয়েলা। একদিকে সুউচ্চ আন্দিস পর্বতমালা,অন্যদিকে ক্রান্তীয় অরণ্য। এই অবকাঠামোতে দেশটির ভূ-প্রকৃতি মোটামুটিভাবে আন্দাজ করা যায়! ভেনেজুয়েলারই এক রহস্যময়ী আবহাওয়াগত ঘটনা নিয়ে কিছু কথা বলবো। শোনার পর হয়তো মনের মাঝে হঠাৎ কেউ বলে উঠবে ; “খুব কাছ থেকে আমিও যদি একবার দেখতে পারতাম !”
কাটাটুম্বো (কাতাতুম্বো) নদীর মুখেই মারাকাইবো হ্রদ। কিংবা এভাবেও বলা যায়,কাতাতুম্বো নদীরই এক অবিচ্ছিন্ন অংশ মারাকাইবো। আকারে খুব ছোট হলেও,এই জায়গাটিতে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে অনন্য এক বিস্ময়। দুঃখের ব্যাপার, বিস্ময়কর হলেও ঘটনাটি পৃথিবীর জন্য প্রকার হুমকী-স্বরূপ। গ্রীনহাউজ গ্যাস “ট্রপোস্ফিয়ারিক ওজোন”- তৈরীর জন্য এই মারাকাইবোকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়ী এলাকা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু কেন! এর পেছনেই আছে সেই রহস্যময়ী আবহাওয়াগত কারণটি।
পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চকম্পাংকের বজ্রপাত ঘটে চলেছে মারাকাইবো’র দক্ষিন-পশ্চিম কোণায়। আকাশ-জুড়ে বিদ্যুতের ঝলকানী এখানে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। বছরে প্রায় ২০০ দিনেরও বেশি সময়,মারাকাইবো হ্রদের রাতের আকাশে চলে বিজলী-বাতির খেলা। প্রাকৃতিকভাবেই সারা রাত ধরে উৎসবমুখর থাকে এই এলাকাটি। আর আমরা যতটা ব্যাবধানে বিদ্যুতের চমক দেখে অভ্যস্ত,তার থেকেও অনেক বেশি কম ব্যাবধানে এখানে চলমান অবস্থায় এক একটি বজ্রাঘাতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই ধরুন, কখনো কখনো প্রতি মিনিটে ২৫- ৩০ টির মত বিজলী চমকাচ্ছে আকাশে! হিসেবমতে বলা হয়,বছরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে, এখানে প্রায় ২৫০ টি আকস্মিক বিদ্যুৎ ঝলকের দেখা মিলবে। পর্বতমালায় বাঁধা পেয়ে ফিরে আসা উচ্চগতির বাতাস আর সাগর-উপকুলের বাতাসের আবদ্ধ অঞ্চলে ঘটিত সংঘর্ষকেই বজ্রপাতের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।
মারাকাইবো ভেনেজুয়েলার জুলিয়া স্টেটে অবস্থিত। প্রাকৃতিক এই রহস্যময়ী ঘটনাটির প্রাণ-কেন্দ্র হিসেবে জুলিয়া স্টেট বেশ আদিখ্যেতাই যেন দেখাচ্ছে। তাদের পতাকায় বিদ্যুতের ঝলক, কোট অব আর্মস-এ বিদ্যুতের ঝলক,এমনকি জাতীয় সঙ্গীতেও আছে মারাকাইবো’র ঝলকানীর কথা! সাহিত্যের পাতায়,কবির কবিতায় নানানভাবে উঠে এসেছে মারাকাইবোর এই বজ্রপাত। শতাব্দীর পর শতাব্দী, এই প্রাকৃতিক ঘটনাটি পরিচিত হয়ে আসছে “লাইটহাউজ অব মারাকাইবো” নামে। আদিখ্যেতা দেখানোটা বোধ হয় যুক্তিযুক্তই !
স্প্যানিশ “রিলামপাগো দে কাতাতুম্বো” অর্থাৎ কাতাতুম্বোর বিদ্যুৎ ঝলক দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে আসেন। বিশেষ আত্মরক্ষামুলক ব্যাবস্থায় উপভোগ করেন দীর্ঘ রজনীর আলোক ঝলকানী উৎসব। নদী আর হ্রদের সন্ধিঃক্ষণে রাতের আকাশে সৃষ্টির রহস্যময়তা আর মুগ্ধতায় ডুবে যেতে কার না ইচ্ছে করবে! ওজোন গ্যাস যে হারে তৈরী করছে,তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে নাহয় অন্য কোনো উপায় বেছে নেয়া যাবে। সবকিছু মাথায় রেখেই,পৃথিবীর এমন চমৎকার একটি জায়গায় নিঃস্তব্ধ রাতে মারাকাইবোর আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হওয়া কি খুব বেশি অপরাধ হবে?
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম